সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী কলেজেও ১৬ জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার কলেজ প্রশাসনের আয়োজনে কলেজ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে জুলাই পুনর্জাগরণের ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়। তবে জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ডাকা হয় নি কোনো শহীদ স্বজনকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৬ জুলাই রাজশাহী কলেজেও নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে জুলাই শহীদ দিবস। আমন্ত্রণ পেয়ে সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ২৪’র জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে রাখেন বক্তব্যও। তবে সেখানে দেখা যায় নি কোনো শহীদ পরিবারের স্বজন কিংবা আহত জুলাই যোদ্ধাকে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহী কলেজের একমাত্র শহীদ রায়হান আলীর পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করে নি কলেজ প্রশাসন। জানানো হয় নি রাজশাহীতে আরেক শাহাদতবরণকারী শহীদ সাকিব আঞ্জুমের স্বজনদেরও।
শহীদ পরিবারকে উপেক্ষার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে রাজশাহী কলেজের পক্ষ থেকে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও শহীদদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে রাজশাহীর কোনো শহীদ পরিবারের সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শহীদদের আত্মত্যাগের সবচেয়ে বড় সাক্ষী ও উত্তরাধিকারী হচ্ছেন তাঁদের পরিবার। তাঁদের উপস্থিতি ছাড়া শহীদদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো কখনোই সম্পূর্ণ হয় না।
তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত অযত্ন ও অবিবেচনার কাজ হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই, ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন যেন শহীদ পরিবারবর্গের যথাযোগ্য সম্মান ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করেই করা হয়। যাতে তাঁদের ত্যাগ ও বেদনার কণ্ঠস্বর সবার সামনে পৌঁছে যায় এবং নতুন প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টা দুঃখজনক এবং বেমানান। আমাদের রাজশাহীতে যেহেতু দুইজন শহীদ আছে, দুই পরিবারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হলে অনুষ্ঠানটা পরিপূর্ণতা লাভ করতো। বিশেষ করে আমাদের রাজশাহী কলেজের গর্ব রাজশাহী কলেজের জুলাই বিপ্লবের একমাত্র শহীদ রায়হান আলী ভাইয়ের পরিবারকে ডাকা দরকার ছিল। কিন্তু কলেজ প্রশাসন বিষয়টা গুরুত্ব দেয়নি।
আমরা আগেও দেখেছি কলেজ প্রশাসন শহীদ রায়হান আলীর নামে ভবনের নামকরণের সময়ও ইচ্ছাকৃত ভুল করছিল। আবারও দেখলাম যে তারা তাদেরই কলেজের একমাত্র শহীদ ছাত্রের পরিবারকে এরকম একটা সমাবেশে ডাকল না। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে কলেজ প্রশাসনের যথেষ্ট অনীহা আছে বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রশিবির নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘কলেজ প্রশাসন বরাবরই ২৪- ইস্যুতে অপ্রত্যাশিত আচরণ করে আসছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তীতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কলেজে অনেক পরিবর্তন আসলেও অভ্যন্তর থেকে এখনও একটা গোষ্ঠী বিতর্কিত করার চেষ্টায় আছেন। তারই অংশ হিসেবে গত বছরের ১৬ জুলাই কলেজের নিন্দনীয় ঘটনায় দায়সারা তদন্ত কমিটি, কলেজের ডিজিটাল বোর্ডে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বার্তা প্রকাশ, বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত শিক্ষককে প্রশ্রয় দেওয়া, আওয়ামী আমলে প্রশাসনের কাছে সুবিধাভোগী ও নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষকদের শেল্টার, নতুন ভবনে রায়হান আলীর নামকরণ কাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটারও কোনো সমাধান করা যায় নি। কলেজ প্রশাসন দ্রুতই তাদের ভুলগুলো শোধরাবেন বলেও আশা করেন তিনি।
জানতে চাইলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহী কলেজের একমাত্র শহীদ রায়হান আলীর বাবা মোঃ মুসলেম উদ্দীন বলেন, এ রকম প্রোগ্রামের ব্যাপারে রাজশাহী কলেজ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। আমরা রাজশাহীতেই জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে ছিলাম। কলেজে তাকে স্মরণ করে দোয়া হচ্ছে, জানলে আমরা সেখানেও যেতাম।
তবে এ বিষয়ে জানতে জুলাই শহীদ দিবস কর্মসূচির সভাপতি ও রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুঃ যহুর আলীর সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি। ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
আলোকিত গৌড়/এম.আর
মন্তব্য করুন: