[email protected] বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২

যুদ্ধ বিরতি লংঘন করে ইসরায়েলের

গাজায় বিমান ও স্থল হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ তবুও বিশ্ব নেতাদের নীরবতা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৭
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ০৫:০৩

সংগৃহিত ছবি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান ও স্থল হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চালানো বিমান হামলায় ৪০০-এর বেশি নিরীহ বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এছাড়াও, বুধবার (১৯ মার্চ) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করার জন্য স্থল হামলা শুরু করেছে, যা গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একটি আংশিক বাফার জোন তৈরি করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই হামলার ফলে গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

হামাস সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন। গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী ইশাম দা-লিস, বিচার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আহমেদ আল-খাত্তা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান বাহজাত আবু সুলতানসহ অনেকেই শহীদ হয়েছেন।  

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিমান হামলার পেছনে হামাসের সঙ্গে চলা যুদ্ধবিরতির আলোচনার ব্যর্থতা এবং সন্ত্রাসী হুমকিকে দায়ী করেছেন। তবে ফিলিস্তিনি নেতারা এই হামলাকে বেসামরিক জনগণের ওপর ‘প্রতারণামূলক’ আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এবং হামাস বলছে, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল গাজায় তাদের প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামোকে ধ্বংস করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মনোবল ভেঙে দেওয়া।  

গাজা সিটি, উত্তরাঞ্চল, খান ইউনিসসহ একাধিক অঞ্চলে বিমান হামলার ফলে হাসপাতাল, উদ্ধার সংস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকলেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্যের আহ্বান জানানো হয়নি। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোও এই সংকটে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।  

এই হামলার খবর জানার পর বিশ্বজুড়ে গভীর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা তাদের নৈতিক দায়িত্বহীনতারই প্রতিফলন। প্রতিবেশী দেশগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো কার্যকর সহায়তা বা সমর্থন দেখা যায়নি, যা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের উদাসীনতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।  

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজার মধ্যাঞ্চলে স্থল হামলা শুরু করেছে। এই হামলার উদ্দেশ্য হলো গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একটি আংশিক বাফার জোন তৈরি করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা ‘নেতজারিম করিডর’ পুনর্দখল করেছে। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনারা এই এলাকা ছেড়ে গিয়েছিল। এরপর দক্ষিণাঞ্চল থেকে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি উত্তরাঞ্চলে ফিরে গিয়েছিলেন, যদিও তাদের বেশিরভাগ বাড়িঘর ইতিমধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে। 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, হামলা চালানো এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়া হবে। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি জানান, গাজায় নতুন হামলার তীব্রতা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, হামাস যদি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে ইসরায়েল এমন তীব্র হামলা চালাবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান ও স্থল হামলা নিরীহ বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই হামলায় শহীদদের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ছিল এই সংকট নিরসনে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া এবং যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। কিন্তু তাদের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের নৈতিক দায়িত্বহীনতারই প্রমাণ।  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই নিষ্ঠুর নীরবতা ইসরায়েলকে আরও উৎসাহিত করছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগকে দীর্ঘায়িত করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোরও উচিত ছিল এই সংকটে এগিয়ে আসা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা। কিন্তু তাদের উদাসীনতা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখনই কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। অন্যথায়, এই নীরবতা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, CNN, রয়টার্স 

আলোকিত গৌড়/এম.আর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর