[email protected] বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের চারটি শর্ত অপরিহার্য: আল মারুফ

মাহমুদুল তুষার

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:১২
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:০৯

গ্রাফিক্স : আলোকিত গৌড়

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের নীতি অনুসারে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের চারটি শর্ত অপরিহার্য।

আর তা হলো-

১। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড।
২। সেই ভূ-খন্ডের সার্বভৌমত্ব।
৩। জনগণ।
৪। সরকার ব্যবস্থা।

উপরুক্ত শর্তগুলো পর্যবেক্ষণে এটা
প্রতীয়-মান - ১ নং শর্তের উপর অপরাপর শর্তগুলো নির্ভরশীল অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড বা মানচিত্র থকলেই সার্বভৌমত্ব প্রত্যাশা করা যায় আর সার্বভৌমত্ব মানেই জনগন ও সরকার ব্যবস্থা।

আপনি কি কখনো শুনেছেন এমন এক রাষ্ট্রের কথা, যার নির্দিষ্ট কোনো মানচিত্র নেই কিন্তু অন্যান্য উপাদানগুলো ঠিকই আছে? কথাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।ইহুদিরা জার্মান থেকে বিতাড়িত হবার পর এমনই এক কাল্পনিক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। যার নাম "আল জুদান"। এই রাষ্ট্রের আছে নির্দিষ্ট জনগন,পার্লামেন্ট ও নিজস্ব সমাজব্যবস্থা।শুধু নেই এর নির্ধারিত কোনো সীমারেখা।

তাদের পার্লামেন্টকে বলা হয় "সেনহাড্রিন" (senhedrin) এবং এর সাংসদরা হচ্ছেন বিভিন্ন অঞ্চলের রাবাই বা ধর্মগুরুগণ আর এদের সমাজব্যবস্থার নাম "কাহাল" (qahal) যা প্রত্যেক ইহুদিদের মান্যকরা বাধ্যতামূলক।

তাদের এমন কাল্পনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা যে কতটা ঘৃণ্য তা রাষ্ট্রের নামকরণের কারণ উৎঘাটনেই আঁচ করা যায়।বিষয়টাকে পরিষ্কার করার জন্য একটু পিছনে যাওয়া জরুরী।

Israel Shahk ১৯৯৪ সালে ইহুদি জাতির ইতিহাস নিয়ে
"Jewish History,Jewish Religion,The Weight of three Thousand Years" নামক একটি বই রচনা করেন। উক্ত বইয়ের উপাত্তের ভিত্তিতে --

ইহুদিরা মিশরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সিনাই উপত্যাকা দিয়ে প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করে। এর প্রায় ৪৫০/৫০০ বছর পর রাজা ডেভিড (দাউদ আঃ) জেরুজালেমকে শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তাঁর ছেলে সোলোমান (সোলাইমান আঃ) বনী ইসলাইলের ১২ পুত্রের নামে ১২টি প্রদেশ নিয়ে এখানে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।তবে তাঁর মৃত্যুর পর রাজটি উত্তর ও দক্ষিণ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।উত্তরে দশটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় Kingdom of Israel এবং দক্ষিণে দু'টি রাজ্য (জুদাহ ও বেনজামিন) নিয়ে গঠিত হয় Kingdom of Judah।

এরপর খ্রিষ্ট্রপূর্ব ৫৮৬ তে ব্যাবিলনিয়রা জুদায় আক্রমণ করে এবং দু'গোত্রের বহু ব্যক্তিদের বন্দি করে। সে বন্দিদশায় তারা নিজেদের মধ্যে একজন ধর্মগুরু নির্বাচন করে। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজার স্বীকৃতি পান।যাকে বলা হতো Exilarsh।তিনি বন্দিদের মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য এক ধর্মিয় চেতনার জন্ম দেন।পরবর্তীতে আখেমনিডাদের হাতে ব্যাবিলনের পরাজয় ঘটলে তারা আবার জেরুজালেমে ফিরে আসে এবং তাদের সে জিইয়ে রাখা ধর্মীও চেতনা পর্যায়ক্রমিক ভাবে রাষ্ট্রীও ধর্মে রুপ নেয়।যা তারা জাতিগত নাম অনুসারে জুদা নামে সংজ্ঞায়িত করে।অর্থাৎ জুদা থেকে জুদাইজম। ৭০ খ্রিষ্টাব্দের পর এই রাজ্যের আর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না।

যদিও তারা ঘৃণ্য বেলফোরের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বর্তমানে এক অবৈধ মানচিত্রের জন্ম দিয়েছে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে এই সীমানায় তারা সন্তুষ্ট নয়।তারা Kingdom ofJudha উদ্ধার করতে চায়। একথা খোলাখোলি ভাবেই তারা বলে থাকে-- আমাদের একটি দৃশ্যমান মানচিত্রের সাথে অদৃশ্যমান মানচিত্রও আছে যা আমরা বুকে লালন করি।

তাদের এই ঘৃণিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এমন কোনো গর্হিত কাজ নেই যা তারা করেনি। সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরুতে তাদের জুড়ি নেই।সমস্ত ভালো-মন্দ তারা তাদের স্বার্থের মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করে।এ জাতি এতোটাই অকৃতজ্ঞ তার বাস্তব উদাহরণ প্যালেস্টাইন।

১৯২২ সালে পূর্ব ইউরোপে যে সোভিয়তের সুচনা ঘটে তা ছিলো মূলত তাদের কাহাল ব্যবস্থার অনুরুপ।১৯০৫ সালে সোভিয়ত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ফাঁস হলে রাশিয়ার সম্রাট নিকোলাস ইহুদিদের নাগরিকত্ব বাতিল করেন। ফলে তাদের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী উদ্বাস্ত হয়ে পড়ে।তৎকালিন সময়ে জার্মানের প্রায় ৫০ শতাংশ পত্রিকা ইহুদিদের দখলে ছিলো। তারা সে সব পত্রিকায় পিছনের তথ্য গোপন করে এক মায়া কান্নার ঝড় তুলে। ফলে জার্মান সম্রাটের মানবিকতার উদয় হয় এবং ইহুদিদের জন্য তার সীমানা খুলে দেন। প্রতিদানে এই অকৃতজ্ঞ জাতি জার্মানদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে এবং রাজ্যের গতি নিজ স্বার্থের দিকে প্রবাহিত করে।ফলশ্রুতিতে ১৯২৩ সালে জার্মানদের কপালে নেমে আসে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক অধঃপতন।

অবশেষে ১৯৩৩ সালে এ্যাডলফ হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসে এবং এই অচল অবস্থা দূরিকরণের জন্য বেশ কিছু কার্যকারী পদক্ষেপ নেয় এবং তা ফলপ্রসূও হয়।তাদের এই অর্থনীতির অগ্রগতির বিবর্তন দেখে অস্ট্রিয়াও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এমতাবস্থায় ইহুদিরা তাদের শয়তানি কার্যক্রম নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ে এবং ধারণা করে হয়তো একদিন রাশিয়ার মতো এই জার্মন থেকেও বিতাড়িত হতে হবে।তাই তারা নতুন করে ফন্দি আঁটে। ফলে পৃথিবীজুড়ে অল্পদিনের মধ্যে নেমে আসে যুদ্ধ নামক মাহ দুর্ভোগ।

১৯৩৪ সালের জুন মাসে "Les Annales" নামক পত্রিকায় জার্মান ইহুদি লেখক Emil Ludwig Cohn বলেছিলেন--

' হিটলার কোনো যুদ্ধে যাবে না। এমনকী কোনো যুদ্ধে জড়াতেও চায় না। কিন্তু আমরা তার ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেবো।হয়তো এ বছর নয়তো পরের বছর।'

এই প্রসঙ্গে My Political Testament এ হিটলার উল্লেখ্য করেন--

'এটা পুরোপুরি অসত্য,আমি বা জার্মানির কেউ ১৯৩৯ সালে যুদ্ধে জড়াতে চেয়েছি।এর নেপথ্যে ছিল আন্তর্জাতিক ইহুদি সংগঠনগুলোর ষড়যন্ত্রময় পরিকল্পনা।তারাই আমাদের যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য করেছে।ধ্বংসাত্মক প্রথম যুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধের কথা আমি কখনো কল্পনাও করিনি;হোক তা আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।'

আরেকটু উপরে যাওয়া যাক,জার্মানি-হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া ও অটোমানদের নিয়ে গড়ে উঠেছিলো কেন্দ্রীয় শক্তি। অপর দিকে রাশিয়া-ব্রিটেন-ফ্রান্স ও সাইবেরিয়ানরা গড়ে তুলেছিলো মিত্র শক্তি।১৯১৬ সালের দিকে কেন্দ্রীয় শক্তির প্রভাবে মিত্র শক্তির প্রায় নাজেহাল অবস্থা।তারা ব্রিটেনকে শান্তি আলোচনায় আহ্বান জানালে ব্রিটেনও প্রায় রাজি।কেননা রাশিয়ায় তখন বলশেভিক বিপ্লব তুঙ্গে আর সে সময় ফ্রান্সও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ থামাতে ব্যস্ত।সুতরাং ব্রিটেন চিন্তা করলো একা একা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বোকামি।

এরপর আবির্ভাব ঘটে জার্মান জয়োনিস্টদের।তারা ব্রিটেনকে আশ্বস্ত করে - এখনো যুদ্ধে জিতা সম্ভব।আমরা প্রয়োজনে আমেরিকাকে এ যুদ্ধে সম্পৃক্ত করবো তবে শর্ত হচ্ছে প্যালেস্টাইনকে আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে।ব্রিটেন তাদের শর্তে রাজি হলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে কেন্দ্রীয় শক্তির পরাজয় ঘটে।এরপর শুরু হয় জার্মান জয়োনিস্টদের তথ্য সন্ত্রাসের প্রোপাগান্ডা। তারা বলতে থাকে জার্মানে তাদের ওপর নির্যাজন করা হচ্ছে, সেখানে তারা মানবেতর জিবন যাপন করছে ইত্যাদি।১৯১৯ সারে প্যারিসে শান্তি আলোচনার আয়োজন করা হয়।সেখানে ১১৭জন ইহুদি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। যাদের অনেকেই জার্মান নাগরিক আলোচনার একপর্যায়ে তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্যালেন্টাইন দাবি করে।তখন জার্মান সম্রাট মাথায় হাত দিয়ে বলেন--'এই কি ছিল যুদ্ধের কারণ' তিনি তখন আফসোস করে বলেন একদল বিশ্বাসঘাতককে জার্মানে আশ্রয় দিয়েছিলাম।অবশেষে এর কিছুদিন পর ব্রিটেন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে নিয়ে আসে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম বেলফর ঘোষণা।

তারা সকল জান্টাইল অর্থাৎ ইহুদি নয় এমন সব সম্প্রদায়কে-ই শত্রু মনে করে। তাই তারা চায় না পৃথিবীর কোনো প্রান্তে গড়ে উঠুক কোনো স্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থা।হোক তা গনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক,রাজতান্ত্রিক কিংবা অন্য কোনো তন্ত্র দ্বারা। তারা বিশ্বাস করে স্থিতিশীল যে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এজন্যই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত তার চৌহদ্দির মাঝে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য সহ আশপাশ অঞ্চলগুলোতে কুট চালের মাধ্যমে গড়ে চলেছে বলশেভিকসহ অসংখ্য উত্থান-পতন।তাদের এই কুটচাল সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে পড়ুন #সিক্রেট_অব_জয়োনিজম।

বইটি ইহুদি সাম্রাজ্যবাদীদের ফাঁস হয়ে যাওয়া পৃথিবী বিধ্বংসী চাঞ্চল্যকর সব প্রোটোকলের উদ্ধৃতি লেখা।লিখেছে বিশ্বখ্যাত ফোর্ড মোটর কোম্পানি'র প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড।বইটির প্রথমেই পাবেন শত প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে লেখকের দুঃসাহসিক পদক্ষেপের কথা।তিনি ১৯১৯ সালে মে মাসে The Dearborn Independent পত্রিকায় ইহুদিদের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখা শুরু করেন।১৯২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে তাঁর প্রতিটি আর্টিকেল প্রায় ৯ লক্ষ কপি পর্যন্ত বিক্রি হতো।এরপর কীভাবে তা নিষিদ্ধ করা হলো,বাজার থেকে কপি উধাও করা হলো, ক্ষমা চাওয়া নাটক মঞ্চস্থ করা হলো এমন অনেক অজানা কাহিনী।বইটি আমাদের জন্য ভাষান্তর করেছেন ঢাবির মেধাবী সাবেক শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল আজাদ এবং প্রকাশ করেছেন গার্ডিয়ান প্রকাশনী।আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

পাঠ-পরিক্রমা
আল মারুফ

আলোকিত গৌড়/এম.এইচ.টি

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর