অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, গত বছরের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরাই ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপ পাল্টাবে। তারা দেশকে অতীতের বিভাজন থেকে বের করে একটি গঠনমূলক, জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেবে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “তরুণরা ভুল করতেই পারে, কিন্তু সময় ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারা একটি শক্তিশালী ও ন্যায্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে অতীতের অচলাবস্থায় ফিরতে দেবে না।”
তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাদের দৃঢ় সংকল্প ও সাহস না থাকলে আজকের পরিবর্তন সম্ভব হতো না।
বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত বাস্তবতা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা বর্তমান ভূরাজনীতিকে নতুনভাবে গড়ে দিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জনমতের বড় পরিবর্তন ঘটছে।
দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীনকে ঠেকাতে একসময় গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এখন পুনর্মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থায়ী পরিবর্তন ধরে নেওয়া ঠিক হবে না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি সতর্ক করে বলেন, অষ্টম বছরে গড়ানো এ সমস্যা এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি হয়ে উঠছে। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা যুবক-যুবতী অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বেড়ে উঠছে, যা সমাধান না হলে বৈশ্বিক নিরাপত্তা সমস্যা হতে পারে।
দেশীয় অগ্রাধিকারে শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলাও পড়তে পারে না। এ বৈষম্য জাতীয় অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণাভিত্তিক করার আহ্বান জানান তিনি।
রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাজনীতিকে লক্ষ্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, শিক্ষা উন্নত করা ও তরুণদের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে প্রতিষ্ঠান গঠন ও জ্ঞান বিস্তারে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর ড. মাজলি বিন মালিক, নেপালের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ড. দীপক গ্যাওয়ালি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান, দ্য ওয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারদারাজন ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
ঢাকা ইনস্টিটিউশন অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স আয়োজিত এ সম্মেলনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূরাজনীতি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: