[email protected] বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৯

সংগৃহিত ছবি

আজ মঙ্গলবার ১৭ই রমজান (১৮ মার্চ) ইসলামের ইতিহাসের এক গৌরবময় দিন- ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ তথা ২ হিজরির এই দিনে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল ইসলামের প্রথম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ- বদর যুদ্ধ। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাত, যেখানে মুসলিম বাহিনী সীমিতসংখ্যক যোদ্ধা ও সরঞ্জাম নিয়েও মক্কার কুরাইশ বাহিনীর বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে।

মক্কার মুশরিকরা ইসলাম ও নবীজির (সা.) বিরোধিতায় মুসলমানদের ওপর চরম অত্যাচার চালায়, যা মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করে। কিন্তু কুরাইশরা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। তারা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে এবং মুসলমানরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য বদর প্রান্তরে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়। 

এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন, যারা কোনো প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ছিলেন না, বরং সাধারণ কৃষক, ব্যবসায়ী ও মদিনার সাহাবি ছিলেন। কিন্তু তাদের হৃদয়ে ছিল অটল ঈমান ও আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস। 

অন্যদিকে, কুরাইশ বাহিনী ছিল প্রায় ১,০০০ জনের সুসজ্জিত ও অভিজ্ঞ সেনাদল। তাদের হাতে ছিল উন্নত অস্ত্র ও রণসজ্জা, যা মুসলিমদের ছিল না। বাহ্যিকভাবে কুরাইশদের জয় নিশ্চিত মনে হলেও, আল্লাহর গায়েবি সাহায্যে মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। 

বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দেন স্বয়ং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেন, যাতে মুসলমানদের বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়। যুদ্ধের ময়দানে মুসলিমদের সাহায্যের জন্য ফেরেশতারা নেমে আসেন, যা মুসলিম বাহিনীকে নতুন উদ্দীপনা দেয় এবং তাদের মনোবল আরও দৃঢ় করে। কুরআনুল কারিমে এই যুদ্ধকে "ফুরকান" (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী যুদ্ধ) বলা হয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে দাঁড়ায়। এই যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর প্রধান নেতা আবু জাহেলসহ ৭০ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দি হয়। নিহতদের মধ্যে কুরাইশদের প্রধান সর্দারদের অনেকে ছিলেন, যা তাদের মনোবল ভেঙে দেয়। 

অন্যদিকে, মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন সাহাবি শহীদ হন, যারা ইসলামের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন, আর তাদের এই আত্মত্যাগ ইসলামের বিজয়ের পথ আরও সুগম করে তোলে। মুশরিক বাহিনীর প্রধান নেতা আবু জাহেলকে হত্যা করেন হযরত মাআজ (রা.) ও হযরত মুআজ (রা.), দুই কিশোর সাহাবি। পরে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তার মাথা কেটে নবীজি (সা.)-এর সামনে উপস্থাপন করেন। যুদ্ধের পর বদর প্রান্তরে তিন দিন অবস্থান শেষে চতুর্থ দিনে রাসূল (সা.) মদিনার পথে রওনা হন। তার সঙ্গে বন্দি কুরাইশরা ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ছিল। রাসূল (সা.) ও মুসলমানরা যুদ্ধবন্দিদের প্রতি দয়া ও মানবিক আচরণ করেন, যা ইতিহাসে বিরল। 

বদর যুদ্ধ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে। এটি প্রমাণ করে যে, সংখ্যা ও বাহ্যিক শক্তি নয়, বরং ঈমান, ঐক্য ও দৃঢ় সংকল্পই বিজয়ের আসল চাবিকাঠি। 

এই যুদ্ধের পর মক্কার কুরাইশরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায়। পাশাপাশি, মদিনার অভ্যন্তরে মুনাফিক ও ইহুদিদের ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পায়। কুরাইশরা তাদের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, যা পরবর্তীতে উহুদ ও খন্দক যুদ্ধের পথ তৈরি করে। 

আজকের এই মহান দিনে মুসলিম বিশ্ব বদর যুদ্ধের শিক্ষা স্মরণ করে। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামিক সংগঠন বদর যুদ্ধের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। 

বদর দিবস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসে। এটি মুসলমানদের শেখায় যে, ঈমানের শক্তিই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি, এবং আল্লাহর সাহায্য সবসময় সত্যের পক্ষেই থাকে।

আলোকিত গৌড়/এম.আর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর