মানুষের জীবনে বিপদ-আপদ, কষ্ট-দুঃখ অনিবার্য। কারও মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতি, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা কোনো মানসিক ধাক্কা—সবই জীবনেরই অংশ। তবে একজন মুমিনের বিপদে করণীয় কী? কোথায় সে আশ্রয় নেবে? কীভাবে মনকে শান্ত রাখবে? এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মহান আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সা.)। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু সুসময় নয়, দুঃসময়ের পথও দেখানো হয়েছে।
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যারা বিপদের মুখে বলে ওঠে: “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”—“নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” (সুরা বাকারা: ১৫৬)
এই একটি বাক্যই একজন ঈমানদার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়—সবকিছুই আল্লাহর দান, তিনিই আবার তা ফিরিয়ে নেন। এ স্বীকৃতি একজন মুমিনকে ধৈর্য ধরতে সহায়তা করে, প্রশান্তি দেয় তার হৃদয়ে। সে জানে, এ দুনিয়ায় যা হারায়, আখিরাতে তার চেয়ে উত্তম কিছু পাওয়ার আশ্বাস রয়েছে।
পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রহমত ও দয়া, আর তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।” (সুরা বাকারা: ১৫৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে এ দোয়ার আরও বিস্তারিত রূপ আমাদের শিখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, কোনো মুসলিম যদি বিপদের সময় এই দোয়া করে:
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা”—
অর্থাৎ, নিশ্চই আমরা আল্লাহর, এবং আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদের বিনিময়ে প্রতিদান দান করুন এবং এর চেয়ে উত্তম কিছু দিন।”
তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম প্রতিদান দেন। (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসের অন্যতম বাস্তব প্রমাণ হলেন সাহাবিয়া উম্মে সালামা (রা.)। তাঁর স্বামী আবু সালামা (রা.) ইন্তেকাল করলে তিনি এই দোয়া পাঠ করেছিলেন। তখন হয়তো তিনি ভাবতেও পারেননি, আল্লাহ তাঁর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জীবনসঙ্গী করবেন। কিন্তু সেটাই হয়েছিল। তিনি পেয়েছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম পুরুষকে স্বামী হিসেবে। এটি আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই শিক্ষা শুধু একটি ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের জীবনের পথনির্দেশ। আমরা যখন কোনো বিপদে পড়ি, তখন হতাশ হয়ে পড়ি, বুক চাপড়ে কাঁদি, অভিযোগ করি—“কেন আমার সঙ্গেই এমন হলো?” অথচ মুমিনের উচিত আল্লাহর কাছে ধৈর্য চাওয়া, তাঁর ওপর ভরসা রাখা, এবং এই দোয়া করা, যাতে তিনি সেই কষ্টের বিনিময়ে ভালো কিছু দেন।
দুনিয়ায় যা হারায়, তার সবই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া প্রতিদান চিরস্থায়ী ও উত্তম। তাই বিপদের সময় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ যেন শুধু মুখের উচ্চারণ না হয়, বরং তা হয়ে উঠুক আত্মার গভীর উপলব্ধি—যে আমরা আল্লাহরই, তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়।
এই দোয়া হোক প্রতিটি মুমিনের আত্মিক শক্তি, বিপদের অন্ধকারে আলোর দিশা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: