[email protected] শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
১ ভাদ্র ১৪৩২

আল্লাহর প্রিয় হওয়ার আমল তাহাজ্জুদ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ আগষ্ট ২০২৫, ০৬:১১

ফাইল ছবি

ইসলামের ইতিহাসে রাতের নিঃস্তব্ধতা আর আল্লাহর দরবারে নিঃশব্দ দাঁড়ানোর একটি অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায় হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এই নামাজ শুধুই কিছু রাকাত নয়, বরং তা আত্মিক শুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য ও অগাধ রহমতের এক অসাধারণ সেতুবন্ধন।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব কোরআন-হাদিসে এতটাই বারবার উঠে এসেছে যে, এটি শুধু নফল নামাজ নয়—বরং একজন মুমিনের হৃদয়ের আত্মিক অনুশীলন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে কখনো এ নামাজ ছাড়েননি। যদি কখনো কোনো কারণে মিস হতো, তবে পরে তা কাজা করতেন। এমনকি তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে রাতের নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। স্ত্রী আয়েশা (রা.) যখন তাঁকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার তো সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, তবুও কেন এত কষ্ট?”—তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি কি শোকর আদায়কারী বান্দা হব না?”

সহিহ মুসলিমে এসেছে, নবিজি বলেছেন—ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ। আর এ রাতের নামাজই হলো তাহাজ্জুদ। রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা যেমন মুহাররমে, ঠিক তেমনি রাতের নফল নামাজ শ্রেষ্ঠ সব নামাজের মধ্যে। তিরমিজির বর্ণনায় নবিজি বলেন, তাহাজ্জুদ ছিল পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের অভ্যাস। এটি পাপ মোচনের মাধ্যম, গোনাহ থেকে রক্ষা করার ঢাল এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার উত্তম উপায়।

আল্লাহর রাসুল শুধু নিজে তাহাজ্জুদ আদায়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তিনি তাঁর পরিবারকেও এতে উৎসাহিত করতেন। এমনকি সাহাবিদের বলতেন, স্বামী-স্ত্রী কেউ একজন যদি আগে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে, তবে অপরজনকে জাগিয়ে দেবে। যদি সে উঠতে না চায়, তবে মায়া করে তার মুখে একটু পানি ছিটিয়ে দিবে—যাতে সে জেগে ওঠে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারে। একে অপরকে এমনভাবে আল্লাহর পথে টেনে আনার এই দৃশ্য ইসলামি জীবনের এক অমূল্য দিক।

সাহাবি ও তাবেঈদের জীবনেও তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ছিল গভীর। আবু হোরায়রা (রা.) তাঁর স্ত্রী ও খাদেমসহ তিন ভাগে রাতকে ভাগ করে ইবাদত করতেন। একজন নামাজ পড়ে আরেকজনকে জাগাতেন। এমনভাবেই পুরো রাত আল্লাহর ইবাদতে কাটতো।

তাবেঈ যুবাইদ ইবনে হারেস (রহ.)-এর জীবনেও দেখা যায় অনুরূপ এক ব্যতিক্রম চিত্র। তিনি, তাঁর ছেলে এবং ছেলের ভাই তিন ভাগে রাতকে ভাগ করে ইবাদত করতেন। কেউ যদি না উঠত, তিনি নিজেই তার ভাগের ইবাদতও করে দিতেন। এমন নিষ্ঠা, এমন আত্মত্যাগ—তাহাজ্জুদের প্রেমে মুগ্ধ এক জীবনের প্রতিচ্ছবি।

আজকের ব্যস্ত ও ক্লান্তিকর জীবনে মানুষ যখন মানসিক অস্থিরতা, আত্মিক শূন্যতা ও অসন্তুষ্টির বেড়াজালে বন্দি—তখন তাহাজ্জুদের মতো ইবাদত হতে পারে প্রশান্তির শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। রাতের নিস্তব্ধতায় দুই রাকাত নামাজে ডুবে যাওয়া, একান্তে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন—এটিই হতে পারে জীবনের শ্রেষ্ঠ আত্মার আরাম।

তাহাজ্জুদ আমাদের কাছে কোনো বোঝা নয়, বরং আত্মা জাগ্রত রাখার উপায়। এমন একটি ইবাদত, যা শুধুই বান্দা আর প্রভুর মধ্যকার ব্যক্তিগত সংলাপ। যেখানে অশ্রু ঝরে, দোয়া মঞ্জুর হয়, অন্তর প্রশান্ত হয়।

তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর বিশেষ এক দাওয়াত। সেই দাওয়াতে সাড়া দেওয়াই একজন মুমিনের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর