মানুষ স্বভাবগতভাবেই ভুল করে—হোক তা বুঝে কিংবা না বুঝে। তবে ভুল স্বীকার না করা ও তাতে অটল থাকা অহংকারের প্রকাশ, যা ধ্বংস ডেকে আনে। অপরদিকে, অকপটে ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হওয়া এক মহৎ গুণ, যা মানুষকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করে এবং অন্যের কাছে সম্মানিত করে তোলে।
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর মধ্যে একবার বিতর্ক হলে আবু বকর (রা.) দ্রুত তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে এগিয়ে যান। নবী করিম (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, “তোমাদের এই সঙ্গী আবু বকর আগে কল্যাণ লাভ করেছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৬৪০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক মানুষ ভুল করে, আর সর্বোত্তম সেই যে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯)
পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে—যারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে এবং তাওবা করে, আল্লাহ তাঁদের তাওবা কবুল করেন। (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০২)
আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করেন। (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)
ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দি অবস্থায় অনুতপ্ত হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাঁকে মুক্তি দেন। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭)
অন্যদিকে, ইবলিস অহংকারবশত নিজের ভুল স্বীকার না করায় চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হয়।
হজরত আবু বকর (রা.) একবার রাবিআহ আল-আসলামি (রা.)-কে কষ্টদায়ক কথা বলার পর তৎক্ষণাৎ অনুতপ্ত হন এবং তাঁকে একইভাবে প্রতিউত্তর করতে অনুরোধ করেন। রাবিআহ (রা.) অস্বীকৃতি জানালে রাসুল (সা.) শিক্ষা দেন, “তুমি বলো—হে আবু বকর! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।” এতে আবু বকর (রা.) আবেগে কেঁদে ফেলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১৬৬২৭)
ভুল স্বীকার না করলে মানুষ একই ভুল বারবার করে, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারায় এবং অহংকারে নিমজ্জিত হয়। এতে তার ব্যক্তিগত উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয় এবং আখিরাতেও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়।
ভুল স্বীকার করা দুর্বলতা নয়, বরং নৈতিক শক্তির প্রমাণ। যে ব্যক্তি ভুল থেকে শিক্ষা নেয় এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করে। পক্ষান্তরে অহংকার ও ভুলে অটল থাকা শয়তানের বৈশিষ্ট্য, যা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস ডেকে আনে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: