মানবতার ইতিহাসে এক অন্ধকার সময়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ঐতিহাসিকরা এই সময়কে আইয়ামে জাহিলিয়্যাত বা অন্ধকার যুগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সমাজে ছিলো বৈষম্য, অমানবিকতা, অবিচার ও নিপীড়ন। মানুষের মধ্যে ছিল না মনুষ্যত্ব, নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছিল সাধারণ মানুষ।
এমন সময় মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের দূত হিসেবে নবী করিম (সা.) আগমন করেন। কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে— ‘আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)।
আলেমদের মতে, নবীজি (সা.) শুধু নবুয়তের কারণে নয়, বরং তার সত্ত্বাগতভাবেই ছিলেন রহমতের প্রতীক। তার জীবনাচরণে ফুটে উঠেছে দয়া, মমতা, ভালোবাসা ও কল্যাণকামিতা। নবুয়ত পাওয়ার আগেই তিনি সমাজে আল-আমিন (বিশ্বস্ত) ও সাদিক (সত্যবাদী) নামে পরিচিত ছিলেন। সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং অসহায়-দুর্বলদের পাশে দাঁড়ান।
প্রথম ওহি নাজিলের পর যখন নবীজি (সা.) ভীত হয়ে পড়েন, তখন স্ত্রী খাদিজা (রা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার মানবিক গুণাবলীর প্রশংসা করেন। কোরআনে আল্লাহর পক্ষ থেকেও তার কোমল হৃদয়ের প্রশংসা এসেছে— ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)।
নবুয়তের পর তার দয়া ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ আরও বেড়ে যায়। তায়েফে রক্তাক্ত হওয়ার পরও তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের জন্য দোয়া করেন। আবার মক্কা বিজয়ের পর দীর্ঘদিনের শত্রুদেরও ক্ষমা করে দেন।
বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি মানবসমতার ঘোষণা দেন— আরব-অনারব, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কারো ওপর কারো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তাকওয়াই একমাত্র মর্যাদার মাপকাঠি। নারী ও দাস-দাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
মানবজাতিকে বিভেদ ও শত্রুতা থেকে মুক্ত করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার আহ্বান জানান। কোরআনে আল্লাহ বলেন— ‘তোমরা দিলে পরস্পর শত্রু ছিলে, আল্লাহ তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন এবং তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই হয়ে গেলে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)।
মহানবী (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ প্রমাণ করে তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য ছিলেন রহমত ও ত্রাণকর্তা।
আল্লাহ সবাইকে তার সত্যিকার অনুসারী হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: