ইসলামে শহীদি মৃত্যু সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। এটি এমন একটি রূহানিয়াতপূর্ণ অবস্থা, যা মুমিনদের জন্য চূড়ান্ত সম্মান ও আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের মাধ্যম। শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে, যা মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।
কোরআনে শহীদদের মর্যাদা
শহীদদের মর্যাদা আল্লাহর কিতাবে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না।”
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৪)
এ ছাড়া শহীদদের জন্য মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে,
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে, অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে দেব মহাপুরস্কার।”
(সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৪)
হাদিসে শহীদদের ৬টি বিশেষ পুরস্কার
হজরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শহীদ ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ছয়টি বিশেষ পুরস্কার লাভ করে:
১. তাৎক্ষণিক ক্ষমা ও জান্নাতের দর্শন
২. কবরের আজাব থেকে মুক্তি
৩. কেয়ামতের ভয়ের দিনে নিরাপত্তা
৪. সম্মানের মুকুট—যার একটি মণিও দুনিয়ার সব সম্পদের চেয়ে মূল্যবান
৫. ৭২ জন হুরের সঙ্গে বিবাহ
৬. ৭০ জন আত্মীয়ের জন্য সুপারিশের সুযোগ
(সূত্র: সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৬৬৩, হাসান)
শহীদি মর্যাদা লাভের অন্যান্য উপায়
শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হলেই নয়, বরং দ্বীনের জন্য ধন-সম্পদ, সম্মান কিংবা শরীর দিয়ে সংগ্রাম করেও শহীদি মর্যাদা লাভ করা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে সম্পদ হারায়, শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বা মান-সম্মানহানি ঘটে, কেয়ামতের দিন তাকে এমন মর্যাদা দেওয়া হবে যে, লোকেরা আক্ষেপ করে বলবে—‘হায়! যদি আমাদের চামড়াও দুনিয়াতে টুকরো টুকরো করে কাটা হতো!’”
(সুনান তিরমিজি: ২৪০২)
আল্লাহর পথে অবিচল থাকার তাগিদ
শহীদি মৃত্যু মুমিনদের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এটি কেবল যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিটি মুমিন আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে অটল থেকে এই মর্যাদা লাভের আশা করতে পারেন।
সর্বশেষে আমাদের প্রার্থনা—
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে শহীদি মৃত্যুর তাওফিক দান করেন এবং তাঁর দ্বীনের জন্য অবিচল থাকার শক্তি দান করেন। আমিন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: