[email protected] শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১১ আশ্বিন ১৪৩২

ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতিতে মুসলিম শাসনের অবদান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৮

ফাইল ছবি

ভারতীয় পোশাক ও বুনন শিল্পে মুসলিম শাসনামলে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মুসলিম আগমনের আগে সাধারণ মানুষ মোটা সুতা ও অপরিশোধিত পশমের পোশাক ব্যবহার করলেও গুজরাটের সুলতান মাহমুদ বিন মুহাম্মদ গুজরাটি (মাহমুদ বিকরাহ নামে পরিচিত) তাঁত, বুটিক, সেলাই, নকশা ও কাটার কাজের বিকাশ ঘটান। তাঁর সময়ে হাতির দাঁত, রেশমি কাপড় ও কাগজ শিল্পে উন্নতি হয়। শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বিপ্লব ঘটে।

ঐতিহাসিক সাইয়েদ আবদুল হাই হাসানির মতে, সুলতান মাহমুদের আমলে কূপ, খাল, ফুল-ফলের বাগান ও কৃষি সম্প্রসারণে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারিগর, শিল্পী ও নির্মাণকর্মীরা এসে গুজরাটকে সবুজের স্বর্গভূমি ও বাণিজ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত করে।

পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরও বড় কারখানা স্থাপন করে কাপড় উৎপাদনে অবদান রাখেন। ভূমি জরিপ, করনীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কারে মুসলিম শাসকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শের শাহ সুরি নির্মাণ করেন ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড, যা বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই মহাসড়কের দুই পাশে ফলদ বৃক্ষ, নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রামাগার, মসজিদ ও ডাকব্যবস্থা স্থাপন করা হয়।

পশুপালন ও পশুচিকিৎসায়ও মুসলিম শাসকদের বিশেষ অবদান ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গিরের ‘তুজুকে জাহাঙ্গিরি’ এবং ‘আইনে আকবরি’-তে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। হাসপাতাল, সেবা কেন্দ্র, গণউদ্যান, বিনোদনকেন্দ্র ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান মুসলিম শাসনামলেই গড়ে ওঠে।

স্থাপত্য শিল্পে মুসলিমরা নতুন মাত্রা যোগ করে। তাজ মহল এর অনন্য উদাহরণ, যা আজও বিশ্বের বিস্ময়। আলো-বাতাস, নকশা ও সূক্ষ্মতায় মুসলিম স্থাপত্য শিল্প ভারতের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তাঁর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া গ্রন্থে স্বীকার করেছেন, ইসলাম ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আফগান ও মুঘলদের আগমনে ভারতীয়রা মুক্তচিন্তা ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়।

১৯৪৮ সালে জয়পুরে কংগ্রেসের ৫৫তম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে পাট্টাভি সীতারামায়া বলেন, মুসলিমরা ভারতের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে, প্রশাসনকে শক্তিশালী করেছে এবং দেশকে একতাবদ্ধ করেছে।

ড. হান্টারের মতে, দক্ষিণ ভারতে মুসলিম উপনিবেশ শুধু নতুন জীবনই দেয়নি, বরং মসজিদ, দুর্গ, কূপ ও বৃহৎ পুকুরের মাধ্যমে কৃষি ও সভ্যতার প্রসার ঘটিয়েছে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর