মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের আলোকে যৌথ নেতৃত্ব ও সংলাপ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “যেকোনো কাজে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করো” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)।
প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনে যৌথ নেতৃত্বের অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যেমন—মদিনায় হিজরতের পরিবেশ তৈরি, যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, ওহুদের যুদ্ধে পাহারার ব্যবস্থা, হুদাইবিয়ার সন্ধি, বাইআতে রিদওয়ান, মক্কা বিজয়ের পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা এবং খলিফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
কোরআনের শিক্ষা
আল্লাহ বলেন, “স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে প্রীতি স্থাপন করে দিলেন, ফলে তোমরা হয়ে গেলে পরস্পর ভাই ভাই...” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)। আবার ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করার মতো বিভেদ সৃষ্টির ব্যাপারে সতর্ক করে তিনি বলেন, “তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা সুস্পষ্ট নিদর্শন পাওয়ার পরও বিভক্ত হয়ে পড়েছে...” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৫)।
নবী (সা.)-এর শিক্ষা
প্রিয় নবী (সা.) দায়িত্বশীলতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবসময় বিকল্প নেতৃত্ব নির্ধারণ করতেন। মদিনার বাইরে গেলে তিনি সাহাবিদের প্রশাসক বানাতেন—কখনো আলী (রা.), কখনো আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.)।
মুতার যুদ্ধে তিনজন সেনাপ্রধান—জায়েদ বিন হারিসা, জাফর বিন আবি তালিব ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা—নিয়োগ করেছিলেন। তাঁরা সবাই শাহাদাত বরণ করলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব নেন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.), যিনি মুসলিম বাহিনীকে বিজয় এনে দেন।
খলিফাদের উদাহরণ
খলিফা আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতের শুরুতে নানা সঙ্কট দেখা দেয়—মিথ্যা নবীর আবির্ভাব, জাকাত অস্বীকার, ধর্মত্যাগ ইত্যাদি। তিনি যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে ১১টি সেনাদল গঠন করেন এবং আলাদা পতাকা দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত ইসলামের স্বার্থ রক্ষা করে। ইতিহাসে তিনি পরিচিত হয়েছেন “ইসলামের ত্রাণকর্তা” হিসেবে।
ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)-এর যৌথ নেতৃত্বও ছিল কোরআনের শিক্ষার অংশ। আল্লাহ বলেন, “আমি তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের দুজনকে ক্ষমতা দান করব...” (সুরা কাসাস, আয়াত : ৩৫)।
উপসংহার
কোরআন বলছে, “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। আর তাঁর সঙ্গে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরম সহানুভূতিশীল। আপনি তাদের রুকু-সিজদায় লিপ্ত দেখতে পাবেন...” (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৯)।
অতএব, ইসলামে বিভেদ নয়, বরং যৌথ নেতৃত্ব, পারস্পরিক পরামর্শ ও সহানুভূতির মাধ্যমেই শান্তি, ঐক্য ও উন্নতি নিশ্চিত হয়।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: