পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় মানবসমাজের সুপ্রাচীন রীতি। প্রতিবেশী ও সামাজিক বন্ধনের কারণে মুসলমানরা যেমন নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তেমনি অমুসলিমদের সঙ্গেও করতে হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এসব বিষয়ে ইসলামের সুন্নাহ বা সংস্কৃতি কী?
ইসলামে শুভ-অশুভের ধারণা
বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে শুভ-অশুভের ধারণা থাকলেও ইসলামে অশুভ কুলক্ষণের কোনো স্থান নেই। বরং এখানে আছে কল্যাণ কামনার রীতি। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন—“ইসলামে কুলক্ষণ নেই, তবে শুভ লক্ষণ আমাকে আনন্দিত করে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৭৭৬) অর্থাৎ সুন্দর শব্দ ও উত্তম বাক্যকে শুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইসলামের শুভেচ্ছারীতি
ইসলামে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিভিন্ন রীতি রয়েছে—
১. তাহিয়্যা বা সালাম : মুসলমানদের সাক্ষাতে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলা সুন্নত, আর উত্তরে সমবাক্য কিংবা আরও উত্তমভাবে উত্তর দেওয়া কোরআনের নির্দেশ। (সুরা নিসা: ৮৬)
মুসাফাহা (হাত মেলানো) : হাত মেলানো সৌহার্দ্যের প্রতীক। হাদিসে এসেছে, দুই মুমিন পরস্পরের সঙ্গে মুসাফাহা করলে তারা বিদায় নেওয়ার আগেই উভয়ের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। (তিরমিজি, হাদিস ২৭২৭)
মুআনাকা (কোলাকুলি) : সাহাবিরা সফর শেষে সাক্ষাতের সময় কোলাকুলি করতেন। নবীজি (সা.)-ও জাফর ইবনে আবি তালিবকে এভাবে অভিবাদন জানান। (আবু দাউদ)
তাকবিল (চুমু খাওয়া) : কপালে চুমু দেওয়ার প্রমাণ আছে। তবে অধিকাংশ ফকিহ ফিতনার আশঙ্কায় ঘন ঘন কোলাকুলি বা চুমুকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
তারহিব ও তাহলিল : আগন্তুককে ‘মারহাবা’, ‘আহলান সাহলান’ বা সকাল-সন্ধ্যার শুভেচ্ছা জানানো বৈধ।
তাবাসসুম (মুচকি হাসি) : সাক্ষাতের সময় হাসিমুখে অভিবাদন করাও সদকা হিসেবে গণ্য। (তিরমিজি, হাদিস ১৯৬২)
তাহনিয়া (শুভকামনা) : বিশেষ অর্জন বা ঘটনায় দোয়া ও অভিনন্দন জানানোও ইসলামের অংশ। নবীজি (সা.) নতুন দম্পতির জন্য বরকতের দোয়া করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৯০৫)
অমুসলিমদের সঙ্গে শুভেচ্ছা
অমুসলিমদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক শুভেচ্ছা বিনিময় মৌলিকভাবে বৈধ। তবে ইসলামের কিছু বিশেষ রীতি কেবল মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত।
সালাম : ইসলামের বিশেষ ইবাদত হওয়ায় অমুসলিমকে আগে সালাম দেওয়া নিষিদ্ধ। তবে তারা সালাম দিলে উত্তর দিতে হবে—“ওয়ালাইকুম।”
মুসাফাহা : প্রয়োজন ছাড়া অমুসলিমদের সঙ্গে মুসাফাহা অধিকাংশ মাজহাবে মাকরূহ। তবে তারা হাত বাড়ালে সাড়া দেওয়া বৈধ।
হাদিসে নির্দেশ আছে—“তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, মন্দ কাজের পর ভালো কাজ করো, আর মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।” (তিরমিজি, হাদিস ১৯৮৭)
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: