ইসলাম সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ও শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। কোরআন ও সুন্নাহতে মুসলমানদের শুধু নিজেদের মধ্যে নয়; বরং অমুসলিমদের সঙ্গেও ন্যায়, সদাচার ও মানবিক আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলাম ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো জবরদস্তি নেই বলে ঘোষণা করেছে। এর মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয়, ইসলামী সমাজব্যবস্থা সর্বজনীন কল্যাণে সমৃদ্ধ এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট।
মানবিক আচরণের শিক্ষা
ইসলামের অন্যতম শিক্ষা হলো সব মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবিক আচরণ প্রদর্শন করা। মানুষ হিসেবে সবাই সমান, ধর্ম বা বর্ণের পার্থক্য থাকলেও সবাই আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। তাই লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতায় ধর্মের ভিন্নতা কোনো বাধা নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও ইহুদিদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং তা যথাসময়ে পরিশোধ করেছেন। এমনকি অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়া তাঁর সুন্নত।
ধর্ম পালনের স্বাধীনতা
ইসলাম প্রত্যেককে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই” (সুরা বাকারা: ২৫৬)। আবার বলা হয়েছে, “যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা সে কুফর করুক” (সুরা কাহফ: ২৯)। এ আয়াতগুলো স্পষ্ট করে যে ধর্ম বিশ্বাসে মানুষ স্বাধীন।
অমুসলিমদের নিরাপত্তা
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইহুদিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক সনদে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। খলিফা উমর (রা.) বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার পর খ্রিস্টানদের গির্জা অক্ষত রাখেন এবং তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। ইসলামে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমরা (জিম্মি) রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার অধিকারী। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কারও প্রতি জুলুম করবে, তার প্রাপ্য কম দেবে বা সন্তুষ্টি ছাড়া কিছু নেবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হবো।” (আবু দাউদ: ৩০৫২)
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করা
অমুসলিমদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকলেও মুসলমানদের জন্য তাদের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছা বিনিময় অনুমোদিত নয়। এতে দ্বিনের বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের দ্বিন তোমাদের, আমার দ্বিন আমার।” (সুরা কাফিরুন: ৬)
উপসংহার
ইসলাম ন্যায়, সদাচার ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়েছে। অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, লেনদেন ও সদাচরণ করা ইসলামের নির্দেশ। একই সঙ্গে মুসলমানদের জন্য নিজেদের ঈমান ও আকিদা রক্ষা অপরিহার্য। তাই অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছাবিনিময় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি ইসলাম মানবাধিকারের সর্বজনীন রক্ষক এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রণী শক্তি।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: