[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ঈমান ও জ্ঞান—আসমানি হেদায়েতের মূলভিত্তি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৩

ফাইল ছবি

আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তাআলা মহাবিশ্বকে এমন নিয়মে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা পরিবর্তন করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহর নির্ধারিত সীমা বা নিয়ম কেউ লঙ্ঘন করতে পারে না। কিন্তু মানুষকে তিনি দিয়েছেন ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা—যার মাধ্যমে সে কৃতজ্ঞ বা অকৃতজ্ঞ হওয়ার পথ বেছে নিতে পারে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,

“আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।”
(সুরা দাহর, আয়াত: ৩)

ঈমান—মানবজীবনের প্রাণসত্তা
ইচ্ছাধিকারপ্রাপ্ত মানুষের প্রকৃত সাফল্য নিহিত রয়েছে আসমানি হেদায়েত অনুসরণের মধ্যে। সেই হেদায়েতের প্রথম উপাদান হলো—পূর্ণ ঈমান। ঈমান মানবজীবনে হৃদয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন হৃদপিণ্ড দেহকে সচল রাখে, তেমনি ঈমান মানুষের আত্মাকে জীবন্ত রাখে।

ঈমান হলো সেই শক্তি, যা মৃত আত্মাকে প্রাণ দেয়, স্থির হৃদয়ে স্পন্দন আনে। এটি দোয়া কবুলের মাধ্যম এবং আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্যতার চাবিকাঠি। ঈমানের ভেতরে রয়েছে নদীর ক্ষীপ্রতা, সমুদ্রের উদ্বেলতা, বজ্রের গর্জন, আবার রয়েছে রেশমের কোমলতা ও লোহার দৃঢ়তা।

যার অন্তরে ঈমান দৃঢ় হয়, সে কোনো কিছুর বিনিময়ে তা ত্যাগ করে না। ঈমান সমাজে প্রবেশ করলে মানুষের হৃদয় পরিশুদ্ধ হয়, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা দূর হয়ে যায়। প্রবৃত্তির অনুসরণ, পরনিন্দা, অপবাদ ও অন্যায় আচরণ থেকে মানুষ বিরত থাকে। এতে মনুষ্যত্ব পায় এক অনন্য সৌন্দর্য, যা পূর্ণিমার চাঁদের মতো বিকশিত হয়।

আল্লাহর বাণীতে ঈমানের বাস্তব রূপ
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন,

“বেদুইনরা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। বলো, তোমরা ঈমান আনোনি, বরং বলো, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।”
(সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৪)

নবী করিম (সা.) সতর্ক করেছেন,

“তোমরা সত্যিকার মুমিনদের কষ্ট দিও না, তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করো না।”

ঈমানি শক্তির বিজয়গাঁথা
ঈমান যখন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে, তখন তা বদর, কাদেসিয়া, ইস্তাম্বুল বা হিত্তিনের বিজয়ের রূপ ধারণ করে। ঈমানদীপ্ত যোদ্ধা শত্রুর সংখ্যা বা অস্ত্রশক্তিকে ভয় করে না। তার লক্ষ্য থাকে আল্লাহর কালেমা উঁচু করা। ঈমান তাকে সত্য প্রতিষ্ঠায় অবিচল রাখে এবং অন্য মুমিনের প্রতি ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করে।

জ্ঞান—আসমানি হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তম্ভ
আসমানি হেদায়েতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিশুদ্ধ জ্ঞান। এই জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ তার প্রভুকে চিনতে পারে, নিজের কাজ ও পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হয় এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য অনুধাবন করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আদমকে আল্লাহ যাবতীয় বস্তুর নাম শেখালেন।”
(সুরা বাকারাহ, আয়াত: ৩১)

প্রথম মানব আদম (আ.)-কে আল্লাহ জ্ঞানের মুকুট পরিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর এ জ্ঞানের মাধ্যমেই মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। নবুয়তের ধারা থেকেও জ্ঞানের গুরুত্ব স্পষ্ট। কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতেই রয়েছে জ্ঞানের তাগিদ—

“পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন... কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।”
(সুরা আলাক, আয়াত: ১-৫)

বিশুদ্ধ জ্ঞানের উদ্দেশ্য
আল্লাহ তাআলা জ্ঞানচর্চাকে তাঁর নামে যুক্ত করেছেন, যেন তা উপকারী হয় এবং বিভ্রান্তির কারণ না হয়। সত্যিকারের জ্ঞান সেই, যা মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপকারে আসে—যা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর