[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলাম-পূর্ব সভ্যতা থেকে শুরু করে ইসলামী যুগে ডাকব্যবস্থার বিকাশ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৬

ফাইল ছবি

বিশ্বের যোগাযোগব্যবস্থার ইতিহাসে ডাকব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে চীনে এবং খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে অ্যাসেরীয় ও ব্যাবিলনিক সভ্যতায় ডাকব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। ডাকব্যবস্থার প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় মিসরের দ্বাদশ রাজপরিবারের এক ফারাওয়ের নথিতে (খ্রিস্টপূর্ব ২১১১ অব্দে)। সেখানে বার্তাবাহকদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা ও দায়িত্বের বিবরণ রয়েছে।

পারস্য ও রোমানদের যুগে ডাকব্যবস্থা
ডাকব্যবস্থার উন্নয়নে পারস্যের অবদান সর্বাধিক। সম্রাট সাইরাস সাম্রাজ্যজুড়ে এক শক্তিশালী ডাকব্যবস্থা গড়ে তোলেন। পরে দারিয়াস (দারা বিন কাম্বিজ) এটিকে আরো উন্নত করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন। তিনি নির্দিষ্ট রুট তৈরি করেন, তৎকালীন “লেজকাটা প্রাণী” বা দ্রুতগামী বাহন ব্যবহার শুরু করেন এবং প্রশাসনিক তথ্য আদান-প্রদানে এই ব্যবস্থাকে গোয়েন্দা কার্যক্রমেরও অংশ করে তোলেন।

রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারও ডাকব্যবস্থাকে সুসংহত করেন। পরবর্তীতে রোমানরা প্রতিটি প্রশাসনিক অঞ্চলে আলাদা ডাক ব্যবস্থা, ডাক প্রশাসক এবং কর্মকর্তার দায়িত্ব নির্ধারণ করে আধুনিক ডাকব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করেন।

মহানবী (সা.) যুগে ইসলামী ডাকব্যবস্থা
ইসলামি সভ্যতায় ডাকব্যবস্থার সূচনা ঘটে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন সম্রাট ও শাসকের কাছে সিলমোহরযুক্ত চিঠি পাঠান। রাসুল (সা.) নিজেই নির্দেশ দিয়েছিলেন—“তোমরা যখন আমার কাছে কোনো বার্তাবাহক পাঠাবে, তখন সুন্দর নাম ও চেহারার কাউকে পাঠিও।” (লিসানুল আরব : ৩/৮৬)

তাঁর প্রেরিত পত্রবাহকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন—

দিহয়াতুল কালবি (রা.): রোম সম্রাট কায়সারের কাছে

আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা সাহমি (রা.): পারস্য সম্রাট কিসরার কাছে

আমর বিন উমাইয়া দামেরি (রা.): হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসির কাছে

রাসুল (সা.)-এর ব্যবহৃত রুপার আংটিতে লেখা ছিল “মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ”, যা তিনি রাষ্ট্রীয় সিলমোহর হিসেবে ব্যবহার করতেন।

খলিফাদের যুগে ডাকব্যবস্থা
খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ডাকব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। খলিফা আবুবকর (রা.) বিদ্রোহ দমন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগে ডাকব্যবহার করেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ডাকচালানের জন্য রুট নির্ধারণ করেন, সাধারণ মানুষের জন্য ডাক পাঠানোর সুযোগ দেন এবং চিঠি বিতরণের সময় নিজেও উপস্থিত থাকতেন। তাঁর আমলেই ইসলামী রাষ্ট্রে একটি সুগঠিত ডাকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

উমাইয়া যুগে ডাক বিভাগের উন্নয়ন
খলিফা মুয়াবিয়া (রা.) পারস্য ও রোমের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে ডাক বিভাগ গঠন করেন। তিনি দ্রুতগামী ঘোড়া ব্যবহার শুরু করেন, ডাকচৌকি স্থাপন করেন এবং প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সিলমোহর চালু করেন। খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ডাকপথে মাইলফলক স্থাপন করেন ও দেরি হলে শাস্তির বিধান দেন। ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক ডাকপথ পুনর্গঠন করেন এবং পণ্য পরিবহনও শুরু করেন। খলিফা ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) ডাকবাহকদের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করেন ও ডাকঘরের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন।

আব্বাসীয় যুগে ডাক বিভাগের বিস্তার
আব্বাসীয় খলিফাদের সময়ে ডাকব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়। খলিফা আবু জাফর মানসুর বাগদাদে বৃহৎ ডাক প্রশাসন কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সময়ে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ডাক আগমন ও প্রেরণ হতো। প্রধান সড়কের পাশে ৯৩১টি ডাকচৌকি স্থাপন করা হয়।

পরবর্তী যুগে ডাকব্যবস্থা
আব্বাসীয়দের পর ফাতেমি ও মামলুক শাসকরাও ডাক ব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রাখেন। মামলুক আমলে পায়রার মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান শুরু হয়। ভারতবর্ষে শের শাহ সূরির সময় ডাকব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে—তিনি প্রতি তিন মাইল পর পর ডাকচৌকি স্থাপন করেন এবং দ্রুত সংবাদ পৌঁছানোর জন্য “হুলিয়া” নামে ঘোড়সওয়ার নিয়োগ দেন।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর