[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

সাহস ও দয়ার প্রতীক সাহাবি: সেরা অশ্বারোহী আবু কাতাদা (রা.)

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩২

ফাইল ছবি

মুসলিম বাহিনীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী সাহাবি ছিলেন আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.)। তাঁর প্রকৃত নাম হারিস (বা আমর)। তবে উপনাম আবু কাতাদা নামেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। পিতার নাম রিবঈ ইবনে বালদামা এবং মাতার নাম কাবশা বিনতে মুতাহহির। উভয়েই মদিনার খাযরাজ গোত্রের বনু সালামা শাখার সন্তান। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৭৮; তাহজিবুল কামাল, খণ্ড ৩৪, পৃ. ১৯৪; আল-ইসাবা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৭২)

ইসলাম গ্রহণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ

তিনি কখন ইসলাম গ্রহণ করেন তা নির্দিষ্ট নয়, তবে তিনি উহুদ, খন্দকসহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রায় সব যুদ্ধেই অংশ নিয়েছেন।
রাসুল (সা.) তাঁর বীরত্বের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন,

“আমাদের অশ্বারোহীদের মধ্যে সেরা আবু কাতাদা, আর পদাতিকদের মধ্যে সেরা সালামা ইবনে আকওয়া।”
(সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪/৭৮)

৮ হিজরির শাবান মাসে গাতফান গোত্রের বিরুদ্ধে ১৫ সদস্যের একটি অভিযানে তিনি ছিলেন কমান্ডার। অতর্কিত আক্রমণে শত্রুকে পরাস্ত করে ১৫ দিনের মধ্যেই বিজয় অর্জন করেন। তারা মদিনায় ফেরেন ২০০ উট, ২০০০ ছাগল ও বহু বন্দী নিয়ে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ দোয়ার সৌভাগ্য

একবার রাত্রিকালীন সফরে নবী করিম (সা.) তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে তিনবার বাহন থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হন। প্রতিবারই আবু কাতাদা (রা.) তাঁকে ঠেস দিয়ে রক্ষা করেন।
রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, “কে?”
তিনি বললেন, “আবু কাতাদা।”
নবী করিম (সা.) খুশি হয়ে দোয়া করলেন,

“আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন, যেমন তুমি আল্লাহর নবীকে হেফাজত করেছ।”
(মুসলিম, ১/২৩৯)

দয়ালু ও পরোপকারী সাহাবি

আবু কাতাদা (রা.) ছিলেন অতি দয়ালু ও উদার মনের মানুষ।
একবার নবী করিম (সা.) এমন এক ব্যক্তির জানাজা পড়তে অস্বীকৃতি জানান, যিনি ঋণ রেখে মারা গিয়েছিলেন। তখন আবু কাতাদা (রা.) সেই ঋণ নিজের ওপর নেন। নবী করিম (সা.) তখন জানাজা পড়ান।
(মুসনাদে আহমাদ, ২২/৬৫; ৩৭/৩২৮)

অন্য এক ঘটনায়, এক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তাঁর কাছে কেঁদে অনুরোধ করলে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে তার ঋণ মাফ করে দেন। তিনি বলেন,

“যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয় বা ক্ষমা করে দেয়, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে।”
(মুসনাদে আহমাদ, ৩৭/৩০৮)

প্রাণীর প্রতিও মমতা

শুধু মানুষ নয়, প্রাণীর প্রতিও তিনি ছিলেন সদয়।
একদিন তাঁর পুত্রবধূ কাবশা ওজুর পানি রাখলে একটি বিড়াল এসে তা পান করতে থাকে। তিনি পাত্রটি কাত করে দেন, যেন বিড়ালটি সহজে পানি পান করতে পারে।
তিনি বলেন,

“রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়ালের উচ্ছিষ্ট নাপাক নয়; কারণ, তারা ঘরের বাসিন্দা।”
(আবু দাউদ, ১/১০-১১; নাসাঈ, ১/১০-১১)

হাদিস বর্ণনায় সতর্কতা

তিনি রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে দীর্ঘ সময় কাটালেও হাদিস বর্ণনায় ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি ছিল—

“যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা রটনা করে, সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন ঠিক করে নেয়।”
(সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৪/৮০)

আবু কাতাদা (রা.) মোট ১৭০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আনাস ইবনে মালিক (রা.), জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) ও সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব (রহ.) প্রমুখ।
(আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, ৩/১২৮)

ইন্তেকাল ও সমাধি

তাঁর ইন্তেকালের সাল নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, তিনি ৩৮ হিজরিতে কুফায়, আবার অনেকে বলেন, ৫৪ হিজরিতে মদিনায় ৭০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, পরের মতই গ্রহণযোগ্য, কারণ তিনি মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনামলেও জীবিত ছিলেন।

তাঁকে মদিনার বনু সালামা গোত্রের কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭০ বছর, অথচ মুখমণ্ডল ছিল ১৫ বছরের তরুণের মতো উজ্জ্বল।
(আল-ইসাবা, ৭/২৭৪; মুখতাসার তারিখে দিমাশক, ২৯/১১৩-১১৭)

উপসংহার:
আবু কাতাদা (রা.) ছিলেন বীরত্ব, পরোপকার, দয়া ও নবীর প্রতি আনুগত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনী আজও মুমিনদের জন্য প্রেরণার উৎস।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর