[email protected] বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
৬ কার্তিক ১৪৩২

পরিবারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সন্তানদের অধিকার রক্ষার মূল চাবিকাঠি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪১

ফাইল ছবি

পরিবার সমাজের প্রাথমিক একক। একটি পরিবারে যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সন্তানরা নৈতিক, শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। ইসলাম স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে, সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য করা মহাপাপ।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, “সন্তানদের জন্য নির্ধারিত অংশ রাখো, পুত্রের অংশ দুই কন্যার সমান।” (সুরা আন-নিসা : আয়াত ১১)।

এটি প্রত্যেক সন্তানের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশনা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে দান-অনুদানে সমতা বজায় রাখো।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামি দৃষ্টিতে সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য, অবহেলা বা প্রতারণা গুরুতর অপরাধ। জীবিত অবস্থায় এক সংসারের সন্তানদের বঞ্চিত করে অন্য সংসারের পক্ষ নেওয়া শুধু পারিবারিক ক্ষতি নয়, এটি আল্লাহর নৈতিক আদেশের লঙ্ঘন।

অন্যায় বণ্টনের পরিণতি

পরিবারে সম্পত্তি বণ্টন শুধু অর্থের হিসাব নয়, এটি সন্তানদের মানসিক নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের প্রশ্ন। সন্তান যখন নিজের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তার মধ্যে অনিশ্চয়তা, হতাশা ও অবিশ্বাস জন্ম নেয়। ফলে পরিবারে হিংসা, প্রতিশোধবোধ ও অনৈতিক মানসিকতার সৃষ্টি হয়।

হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি তার সন্তানদের প্রতি অবহেলা করে, সে আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত হয়।” সন্তানদের প্রতি অবিচার শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি পুরো সমাজকে বিপর্যস্ত করে।

আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ

বাংলাদেশের আইনে সন্তানের অধিকার রক্ষায় স্পষ্ট বিধান রয়েছে।

Penal Code, 1860 অনুযায়ী সন্তানের প্রতি শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ গুরুতর অপরাধ।

ধারা ৩২৫ অনুযায়ী, শারীরিক ক্ষতিতে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা।

ধারা ৩৭২ ও ৩৭৪ অনুযায়ী মানসিক বা আর্থিক শোষণে ১০ বছরের কারাদণ্ড।

ধারা ৩৬৪(এ) অনুযায়ী প্রতারণা বা সম্পত্তি আত্মসাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হতে পারে।

এছাড়া ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, সন্তানের জীবন, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা পিতা-মাতার আইনি দায়িত্ব।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পরিবার ও সমাজের ভূমিকা

পরিবারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি রাষ্ট্র ও সমাজেরও দায়িত্ব। পারিবারিক সালিস, নৈতিক শিক্ষা, মসজিদ ও মাদরাসায় সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

সন্তানদের অধিকার রক্ষা ও বৈষম্য প্রতিরোধ শুধু নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, এটি সামাজিক শান্তি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতিফলন। বাবা-মা যদি জীবিত অবস্থায় ন্যায়বিচার না করেন, তবে তা সন্তানের মানসিক বিকাশ ও সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একত্রে এগিয়ে এলে নিশ্চিত করা সম্ভব হবেআমাদের সন্তানরা বড় হবে ন্যায়বিচার, বিশ্বাস ও মানবিকতার আলোতে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর