মানুষের জীবনে আকাঙ্ক্ষা একটি স্বাভাবিক ও অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর মধ্যেই থাকে প্রয়োজন ও আনন্দের মিশেল। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের তাড়নায় মানুষ অনেক সময় ভুলে যায়—তা আদৌ প্রয়োজন কি না, কিংবা তার সীমা কোথায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত দুটি বড় ভুল হলো—প্রয়োজন না থাকলেও ইচ্ছার পিছু ধাওয়া করা এবং ইচ্ছার সীমা লঙ্ঘন করা। এই সীমাহীন আকাঙ্ক্ষাই মানুষের দুর্ভোগ, হতাশা ও বিপদের মূল উৎস। ইসলাম ও নৈতিক দর্শন উভয়ই ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছে, কারণ শয়তানও মানুষকে বিভ্রান্ত করে এই ইচ্ছার পথ দিয়েই।
তবে প্রশ্ন হলো, ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিভাবে? বিশেষত খাওয়া-দাওয়া, যৌন আকাঙ্ক্ষা, অহংকার ও ভোগবিলাসের মতো প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ইচ্ছা একসঙ্গে দমন করা কঠিন, তাই শুরু করা উচিত সবচেয়ে সহজ ও মৌলিক ইচ্ছা থেকে—খাওয়া-দাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।
খাওয়া-দাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের দুটি উপায়
১. জ্ঞানভিত্তিক উপায় (বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়ন্ত্রণ):
এটির ছয়টি ধাপ রয়েছে—
১. ক্ষুধা ও তৃষ্ণা কেবল শরীরের প্রয়োজনের সংকেত, এটি কখনো বলে না কি, কতটা বা কখন খেতে হবে।
২. যেহেতু ইচ্ছা অন্ধ, তাই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে বুদ্ধির মাধ্যমে।
৩. ক্ষুধার সময় ধৈর্য ধরার অভ্যাস তৈরি করতে হবে, কারণ ধৈর্যই উন্নতির চাবিকাঠি।
৪. খাদ্য হতে হবে তিন গুণসম্পন্ন—হালাল ও পবিত্র, স্বাস্থ্যকর, এবং মর্যাদাহানিকর নয়।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ার সময়, পরিমাণ ও অভ্যাস নির্ধারণ করা উচিত।
৬. সর্বদা মনে রাখতে হবে, যা খাওয়া হয় তার প্রভাব শরীরে স্থায়ীভাবে পড়ে—পৃথিবীর অধিকাংশ রোগই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস থেকে জন্ম নেয়।
২. আচরণভিত্তিক উপায় (প্রায়োগিক নিয়ন্ত্রণ):
১. প্রকৃত ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খাবেন না।
২. ছোট প্লেটে অল্প খাবার নিন—প্রয়োজনে পরে খান, কিন্তু শুরুতে কম খান।
৩. নিয়মিত রোজা রাখুন, ইফতারে সাহরির তুলনায় কম খান।
৪. বিনা মূল্যে পাওয়া বা দাওয়াতের খাবারে সংযমী হোন। দাওয়াতে গেলে আগেই কিছু খেয়ে যান এবং পরবর্তী দুই–তিন দিন রোজা রাখলে আত্মনিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাওয়া-দাওয়ার নিয়ন্ত্রণ শুধু পেটের বিষয় নয়—এটি আত্মার প্রশিক্ষণ, মনের পরিশুদ্ধি এবং জীবনের ভারসাম্য রক্ষার অনুশীলন। যে ব্যক্তি নিজের খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে ধীরে ধীরে অন্য সব ইচ্ছাকেও জয় করতে সক্ষম হয়।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: