মহান আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি আগুন। এতে যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি আছে ধ্বংসাত্মক দিকও। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা যে আগুন প্রজ্বলিত করো, তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি করো, না আমি সৃষ্টি করি?” — (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৭১–৭৩)
আগুনের চার প্রকার
তাফসিরে ‘রুহুল মাআনি’ অনুযায়ী আগুনের চার প্রকার হলো—
দাহন ও ঔজ্জ্বল্যসম্পন্ন সাধারণ আগুন।
দাহনক্ষম কিন্তু অদৃশ্য জাহান্নামের আগুন।
আলোকিত কিন্তু অদাহনক্ষম—যে আগুনের সামনে মুসা (আ.) কথা বলেছিলেন।
লাকড়ির ভেতর লুকানো সুপ্ত আগুন, যা ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে।
কল্যাণকর ব্যবহারে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত করো।” — (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৮০)
অর্থাৎ, আগুনকে মানবকল্যাণে ব্যবহারের দিকেই ইসলাম আহ্বান করে।
অগ্নি-দুর্ঘটনা রোধে রাসুলুল্লাহর (সা.) নির্দেশ
আগুনকে শত্রু ভাবা : নবীজি (সা.) বলেছেন, “এই আগুন তোমাদের চরম শত্রু। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে তা নিভিয়ে দাও।” (বুখারি ৬২৯৪)
উদাসীনতা পরিহার “তোমরা ঘরে আগুন রেখে ঘুমাবে না।” (বুখারি ৬২৯৩)
পূর্ব-সতর্কতা গ্রহণ :
“পাত্র ঢেকে রাখো, দরজা বন্ধ করো, বাতি নিভিয়ে ঘুমাও।” (বুখারি ৬২৯৫)
সচেতনতা সৃষ্টি : ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের দায়িত্ব হলো অগ্নি-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলা।
আল্লাহর নাম স্মরণ : ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করা, বাতি নিভানো, পানি ও খাবার ঢেকে রাখার সময় আল্লাহর নাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নবীজি (সা.)। (বুখারি ৩২৮০)
অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে বাঁচার দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন— “হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই আগুনে দগ্ধ হওয়া, পানিতে ডুবে যাওয়া, ঘরচাপা পড়া ও ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার মৃত্যু থেকে।”
(সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৫৫৩১)
আগুন লাগলে করণীয়
নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমরা যখন আগুন দেখবে, তাকবির দাও; কারণ তাকবির আগুন নিভিয়ে দেয়।”
(জামিউস সগির, হাদিস: ৬৩৭)
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, আগুন থেকে শয়তান সৃষ্টি হওয়ায় আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করলে আগুনের প্রতাপ কমে যায়। (জাদুল মাআদ: ৪/১৯৪)
অগ্নি-নাশকতার শাস্তি
ইসলাম অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো গুরুতর অপরাধ।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩০১৬)
হানাফি মাজহাব অনুসারে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে হয় এবং প্রাণহানি ঘটলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হয়।
শাফেয়ি ও মালেকি মাজহাব মতে, ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু ঘটালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
আল্লাহ দেশ ও জাতিকে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন।
— আমিন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: