[email protected] বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
৭ কার্তিক ১৪৩২

ইসলাম শেখায় ঐক্যের পথ, বিভেদের নয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৮

ফাইল ছবি

ইসলাম কোনো একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয়; বরং এটি এক মহা ঐক্যের বার্তা। ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয়—ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু হূদয় যেন এক থাকে; পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য একটাই—আল্লাহর সন্তুষ্টি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনজুড়ে উম্মাহর ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) এক ব্যক্তিকে কোরআনের আয়াত ভিন্নভাবে তেলাওয়াত করতে শুনে নবীজির কাছে নিয়ে গেলে রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা দুজনেই ঠিক পড়েছো। তবে তর্কে জড়িও না; তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি তর্ক-বিতর্কে ধ্বংস হয়েছিল।” (বুখারি, হাদিস: ২৪১০)
এই ঘটনার মাধ্যমে ইসলাম শেখায়—ভিন্নতা সবসময় বিভেদ নয়; বরং অহংকার ও তর্কপ্রবণতাই বিভেদের সূচনা।

ঐক্যের মূল ভিত্তি

ইসলামের ঐক্য কোনো রাজনৈতিক চুক্তি নয়, এটি ঈমানের শিকড়ে প্রোথিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।” (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

যখন মুসলমানরা কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে, তখন বর্ণ, ভাষা বা জাতিগত কোনো পার্থক্যই তাদের আলাদা করতে পারে না। কিন্তু দলীয় স্বার্থ, গোষ্ঠী ও নেতাবাদ যখন প্রাধান্য পায়, তখনই উম্মাহ ভেঙে পড়ে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“মুমিনগণ এক দেহের মতো; দেহের একটি অঙ্গ কষ্ট পেলে পুরো দেহ জ্বরে আক্রান্ত হয়।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৬)

মতভেদ ও বিভেদ: সূক্ষ্ম পার্থক্য

ইসলাম মতভেদকে অস্বীকার করে না, বরং তা মানবিক বৈচিত্র্য হিসেবে স্বীকার করে। তবে বিভেদ, ঘৃণা ও দলবাজিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
ইমাম শাফেঈ (রহ.) বলেছেন,

“আমার মত সঠিক হলেও তাতে ভুলের সম্ভাবনা আছে, আর অন্যের মত ভুল হলেও তাতে সঠিকতার সম্ভাবনা আছে।”

এমন উদারতা ও বিনয়ই ইসলামী ঐক্যের সৌন্দর্য। কিন্তু যখন কেউ নিজের মতকেই একমাত্র সত্য মনে করে, তখন সৃষ্টি হয় বিভাজন। আল্লাহ সতর্ক করে বলেন,

“তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং মতভেদে জড়িয়ে পড়েছিল।” (সুরা আলে ইমরান: ১০৫)

ঐক্যের যুগে শক্তি, বিভেদের যুগে পতন

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যখন মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ ছিল, তখন তারা পৃথিবীতে ন্যায় ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-র যুগে মক্কা-মদীনার মুসলমানরা এক পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন।
বিপরীতে, আন্দালুসের পতন, বাগদাদের ধ্বংস কিংবা ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের অবসান—সব কিছুর পেছনে ছিল অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও দলাদলি। বাহ্যিক শত্রু নয়, নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্বই ছিল পরাজয়ের মূল কারণ।

আজকের বাস্তবতা

আজ মুসলমানরা নামাজে এক কাতারে দাঁড়ায়, কিন্তু হৃদয়ে কাতার ভেঙে যায়। কোরআন ও নবী এক হলেও আমরা মাজহাব, রাজনীতি ও গোষ্ঠীর নামে বিভক্ত। কেউ নিজেকে “শুদ্ধতম” মনে করে, অন্যকে “বিদআতি” বা “অশুদ্ধ” বলে ফতোয়া দেয়। অথচ কোরআন ঘোষণা করে,

“নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মাহ এক উম্মাহ।” (সুরা আল-আম্বিয়া: ৯২)

ঐক্যই উম্মাহর বেঁচে থাকার শর্ত

আজ সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো ইসলামী ঐক্য পুনরুদ্ধার করা। মুসলমানরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়—বরং এক দেহের অঙ্গ। মত থাকতে পারে, কিন্তু মন যেন না ভাঙে; বিতর্ক নয়, সংলাপ হোক; বিভাজন নয়, ভ্রাতৃত্ব হোক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“মুসলমান মুসলমানের ভাই; সে তার ওপর জুলুম করে না, অবজ্ঞা করে না, পরিত্যাগও করে না।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)

ঐক্য শুধু সমাজের নয়, ঈমানেরও দাবি। ঐক্যই উম্মাহকে জাগিয়ে তুলবে, নতুন শক্তি দেবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ খুলে দেবে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর