দাড়ি রাখা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়; বরং এটি নবী-রাসুলদের সুন্নত, ঈমানদারের পরিচয় এবং তাকওয়া ও আনুগত্যের প্রতীক। কোরআন ও হাদিসে দাড়ির গুরুত্ব, মর্যাদা ও এর প্রতি অনুরাগ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
দাড়ি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পৌরুষত্বের প্রতীক
আল্লাহ তাআলা পুরুষকে দাড়ি দিয়ে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। মানবসভ্যতার সূচনা থেকেই দাড়ি পৌরুষত্ব, মর্যাদা ও গাম্ভীর্যের প্রতীক। ইতিহাসে সব নবী-রাসুলই দাড়ি রেখেছেন।
কোরআনে দাড়ির ইঙ্গিত
যদিও কোরআনে সরাসরি “দাড়ি রাখো” বলে আদেশ নেই, তবে আয়াতগুলোতে এর প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
আল্লাহ বলেন,
“হারুন বললেন, হে আমার মায়ের ছেলে! তুমি কি আমার দাড়ি ও মাথার চুল টানছ?”
(সুরা ত্বাহা, আয়াত: ৯৪)
এ আয়াত প্রমাণ করে যে নবী হারুন (আ.) দাড়ি রেখেছিলেন এবং তা ছিল তাঁর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ।
আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন,
“তুমি রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করো।”
(সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)
অতএব, যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) দাড়ি রেখেছেন, তাই তা অনুসরণ করাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসে দাড়ি রাখার নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক সহিহ হাদিসে দাড়ি রাখার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।
ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি বড় করো; মুশরিকদের থেকে ভিন্ন হও।”
(সহিহ বুখারি: ৫৮৯২; সহিহ মুসলিম: ২৫৯)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“গোঁফ ছেঁটে দাও এবং দাড়ি রেখে দাও; মজুসিদের থেকে ভিন্ন হও।”
(সহিহ মুসলিম: ২৬০)
এ থেকে বোঝা যায়—দাড়ি রাখা শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুস্পষ্ট আদেশ।
দাড়ির শরয়ি হুকুম
উলামায়ে কেরামের মধ্যে দাড়ির হুকুম নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ আলেমের মতে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব—অর্থাৎ আবশ্যকীয় আমল। দাড়ি মুন্ডন করা বা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হারাম বা মাকরুহে তাহরিমি। হাদিস অনুযায়ী দাড়ির পরিমাণ অন্তত এক মুঠি হওয়া উচিত।
দাড়ির উপকারিতা
১. সুন্নতের অনুসরণ: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ বাস্তবায়ন।
২. ঈমানদারের পরিচয়: মুসলিমকে অমুসলিম থেকে পৃথক করে।
৩. পৌরুষত্বের প্রতীক: দাড়ি পুরুষের গাম্ভীর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৪. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: আল্লাহপ্রদত্ত রূপ সংরক্ষণ ইবাদত হিসেবে গণ্য।
৫. চিকিৎসাগত উপকারিতা: দাড়ি মুখমণ্ডলকে রোদ, ধুলা ও জীবাণু থেকে রক্ষা করে।
দাড়ি মুন্ডনের নিষেধ
রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমাদের অনুরূপ কাজ ত্যাগ করে অন্য জাতির অনুরূপ কাজ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
(সুনান আবু দাউদ: ৪০৩১)
অতএব, অমুসলিমদের অনুকরণে দাড়ি মুন্ডন করা মারাত্মক গুনাহের কারণ হতে পারে।
আধুনিক যুগে দাড়ির সংকট
বর্তমান সময়ে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক মুসলিম যুবক দাড়ি রাখাকে পশ্চাত্পদতা মনে করে। অথচ দাড়ি হলো নবুয়তের প্রতীক ও ইসলামি পরিচয়ের বাহক। আধুনিকতার নামে এ সুন্নত ত্যাগ করা মুসলমানদের আধ্যাত্মিক পরিচয়কে ক্ষীণ করছে।
ঈমানি পরিচয়ের অংশ
দাড়ি তাকওয়া, বিনয় ও আল্লাহভীতির প্রতীক। এটি শুধু বাহ্যিক রূপ নয়, বরং এক ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে দাড়ি রাখা মানে নবুয়তের আদর্শ ধারণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।
পরিশেষে, প্রতিটি মুসলমানের উচিত দাড়িকে নিজের ঈমানি পরিচয়ের অংশ হিসেবে ধারণ করা, নবুয়তের এই সুন্নতকে জীবনে বাস্তবায়ন করা এবং ইসলামের আলোয় সমাজকে আলোকিত করা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: