চাঁপাইনবাবগঞ্জে গুম হওয়া আরিফ কে ফিরে পেতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখ আনুমানিক দুপুর পনে ৩ টার সময় কোচিং চলাকালীন সময়ে আরিফুলের বাবা ও আরিফুল বিএনপি মতাদর্শি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় জোর পূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরিবারে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়।

“দুটি সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে দু’চোখে শুধু অন্ধকার দেখছি। সন্তানদের ভরনপোষন ও পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সন্তানদের একটি ভালো পোষাক কিংবা দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ঠিকমত দিতে পারিনা।” এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাচ্ছিলেন, ২০১৭ সালে গুম হওয়া আরিফুল ইসলামের স্ত্রী।

আজ (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের আব্দুল বাসেদ মন্ডলের টোলা গ্রামের বানী ইসরাইলের ছেলে গুম হওয়া আরিফুলকে জীবিত ফিরে পাওয়ার দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে আরিফুল এর স্ত্রী মাজেরা বেগম বলেন, যখন আমি স্বামী হারার শোকে শোকাহত তখন বিভিন্ন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে জিডি কিংবা মামলা না করার জন্য হুমকি প্রদান করে।
স্বামী আরিফুল কে অনেক খুজাখুজির পর কোন সন্ধান না পেয়ে সকল হুমকি উপেক্ষা করে জিডি করার জন্য থানায় গেলে কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আমার জিডি নেওয়াতো দূরের কথা তৎকালীন ওসি আর থানায় না আসার জন্য হুমকি প্রদান করে। তারপরও পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করার জন্য বার বার থানায় ধর্না দিলে আমাদেরও গুম করার জন্য হুমকি প্রদান করে।

তিনি আরোও বলেন, গুমা হওয়া আরিফুল এর শোকে বাবা মোঃ বানী ইসরাইল ২০১৭ সালের ৫ আগষ্ট হঠাৎ প্যারালাইসেস হয়ে শারীরিক ভাবে কর্মক্ষম হয়ে যায়। পরিবারে নেমে আসে আরও এক বিপর্যয়। বানী ইসরাইল দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর অসুস্থ থেকে গুম হওয়া ছেলে আরিফুলের শোকে ২০২২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

মাজেরা বেগম জানান, পুত্র শোকে তাঁর শাশুড়ী আরিফুলের মা মোসাঃ শরিফন বেগম তিনিও পূত্র শোকে দির্ঘদিন যাবৎ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন।
মাজেরা বলেন তাঁর সন্তানেরা বার বার বাবার খোঁজ করে। সন্তানদের বুঝ দেওয়ার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাইনা। সন্তানেরা শুধু বাবাকে খোঁজে।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে গুম হওয়া আরিফুলকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জীবিত অবস্থায় ফেরৎ চান এবং এই গুমের সাথে যারা জড়িতদের বিচার চেয়ে অশ্রুজল কন্ঠে ভেঙে পড়েন মাজেরা বেগম।

মানববন্ধনে আরোও বক্তব্য রাখেন, আরিফুলের মা শরিফুন বেগম, দেবীনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আ ক ম সাহেদুল আলম বিশ্বাস পলাশ, দেবীনগর দ্বিমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, জেলা যুবদলের আহবায়ক তবিউল ইসলাম তারিফ, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দুরুল হুদা, আরিফের ছোট ভাই সোহেল রানা, মেয়ে মাহমুদা।

আরিফুলকে জীবিত ফেরত পেতে ৫ শতাধিক এলাকাবাসী এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।