কাপ্তাই হ্রদে কমছে পানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ

দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকৌশলীরা জানান, কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে মাত্র একটি ইউনিট চালু রেখে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, পানির বর্তমান মজুত দিয়ে পাঁচটি ইউনিট চালানো সম্ভব হলেও সারা বছর উৎপাদন সচল রাখতে কৌশলগতভাবে উৎপাদন সীমিত রাখা হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে ও পানির পরিমাণ আরও কমে গেলে উৎপাদন ২৫–৩০ মেগাওয়াটে নামতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর পানি চট্টগ্রাম শহরের পানির প্রধান উৎস হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের পানি পর্যাপ্ত না থাকলে চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহেও প্রভাব পড়তে পারে। নদীতে পানি প্রবাহ না থাকলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি উজানে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা পরিশোধিত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বাড়াতে পারে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, শুক্রবার (১৬ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ ছিল ৭৭.৩০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। অথচ রুল কার্ড অনুযায়ী এ সময় হ্রদের স্বাভাবিক পানির পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল ৯৩.৯০ এমএসএল। ফলে ১৬.৬০ এমএসএল পানি কম রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হ্রদের পানির পরিমাণ বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০৮.৬৯ এমএসএলে পৌঁছায়। সে সময় পাঁচটি ইউনিট চালিয়ে প্রতিদিন ২১৫–২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মাহামুদ হাসান বলেন, “এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি ইউনিট চালু আছে। এতে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পানির অভাবে আপাতত উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নেই।”

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাঁধের ফলে সৃষ্টি হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ।