জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ‘গণমিনার’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’। এই মিনার রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণি ও বীর উত্তম মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান সড়কের মধ্যবর্তী সবুজ চত্বরে নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, শুধু একটি মিনার নয়—এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নানা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উপাদান সংযুক্ত করে একটি জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম জানান, ৫ আগস্টের বিজয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে সরকারি হিসাবে শহীদ হয়েছেন অন্তত ১,৪০০ জন এবং আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই এই গণমিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই কর্মসূচিকে গণমানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণচাঁদা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণচাঁদা প্রদানের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ প্রয়োজনীয় তথ্য খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
মোহাম্মদ আজম জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে গণমিনার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ এবং আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় সম্মতি দিয়েছে। এই মিনারে জাতিসংঘ স্বীকৃত শহীদদের নাম, পরিচয়, পেশা এবং কোথায় ও কীভাবে তারা শহীদ হয়েছেন—এই সব তথ্য খোদাই করে সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি এই ভূখণ্ডে গত ২৫০ বছরের প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের ইতিহাসও খোদাই ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি কামার আহমাদ সাইমন। তিনি বলেন, আমাদের এই পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। ইতিহাসকে স্মরণ রাখার একটি বড় উপায় হচ্ছে মিনার। মিনার একটি উন্মুক্ত পাবলিক প্লেস, যেখানে মানুষ সম্মান জানাতে আসে। অন্যদিকে, জাদুঘর সাধারণত ঘরবন্দি একটি জায়গা, যেখানে মানুষ কোনো বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের জন্য যায়। তাই আমরা চাচ্ছি এমন একটি মিনার গড়ে তুলতে, যা হবে ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
তিনি আরও বলেন, মিনারটি মূলত দুটি উপাদানে গঠিত হবে—একটি দেয়াল, যেখানে চিত্র ও ইতিহাস খোদাই থাকবে, এবং একটি এপিটাফ, যেখানে শহীদদের নাম, জন্ম ও মৃত্যু, পেশা এবং শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়সহ বিস্তারিত তথ্য যুক্ত ফলক থাকবে।
গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির মতে, এই স্মৃতিস্তম্ভ হবে এমন এক প্রতীক, যা রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সকল স্তরের নাগরিকের অংশগ্রহণে নির্মিত হবে। এটি শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের নিদর্শনই নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে স্বাধীনতা, সম্মান ও প্রতিরোধের শিক্ষা দেবে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: