রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ঘোষিত হয়েছে রাকসু, হল সংসদ এবং সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল। তবে এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
রাকসু নির্বাচনকে 'সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায়' বলে অভিহিত করেছেন সুলতান আহমেদ রাহী। ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে তিনি লিখেছেন, "এনসিপি-শিবির ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের দাবি বা প্রস্তাবনার প্রতি প্রশাসন কোনো সম্মান দেখায়নি, বরং সেগুলোকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। সালেহ হাসান নকিব প্রশাসন ও তার নিযুক্ত একচোখা নির্বাচন কমিশন—এরা যেন এনসিপি-শিবিরের গোপন কাগজপত্র ছাড়া কোনো কিছু দেখতেই রাজি নয়! আলোচনা নয়! সংলাপ নয়, ফরমায়েশি তফসিল!"
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল তফসিল ঘোষণার পর নিজের ফেসবুক পোস্টে আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে লেখেন, 'আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র হলে একদলীয় আধিপত্য বাড়বে। যার প্রমাণ বিগত ডাকসু নির্বাচন। ফলস লাইন তৈরি করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অর্থ ছড়ানোর মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে ম্যানুপুলেট করা সহ হল কেন্দ্রিক বহু অভিযোগ এসেছিলো সেবার।'
ফুয়াদ রাতুল আরও লেখেন, সকল হল প্রভোস্ট নিরপেক্ষ নয়। গোটা একটি হলের মেয়েদের চরিত্র নিয়ে অশ্রাব্য মন্তব্য করা বিবেকহীন দলান্ধ শিক্ষক পর্যন্ত এখন দায়িত্বে আছেন। আবার ৫ তারিখের পর অবৈধ সিট বন্ধন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে একটি দলের গুপ্ত সদস্যদের আধিপত্য কায়েম। প্রভোস্টদের কাছে সংরক্ষিত ১০% সিট প্রদানে অসততা সহ বহু অভিযোগ রয়েছে।
তিনি লেখেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় "একাডেমিক ভবনে" ভোট কেন্দ্র স্থাপন সহ একাধিক দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি 'ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্র শিবির' ব্যতীত আর কারোর দাবি দাওয়াই প্রশাসন কর্ণপাত করছেনা। প্রশাসনের এই প্রবণতা একটি সচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাকসু আয়োজনের অন্তরায়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. নওসাজ্জামান রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে 'প্রশংসনীয় পদক্ষেপ' হিসেবে দেখছেন। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, " অবশেষে রাবি শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের আকাঙ্খিত রাকসুর তপসিল ঘোষাণার মাধ্যমে এর কার্যক্রম অর্ধধাপ এগিয়ে গেলো। রাবি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার পাবে ইনশাআল্লাহ। সকল শিক্ষার্থীকে ধন্যবাদ জুলাইয়ের অন্যতম দফা বাস্তবায়নে সফল হওয়ায় এবং ধন্যবাদ রাবি প্রশাসনকেও।
এদিকে রাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করার পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব জানান, "বেটার লেইট দেন নেভার। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আশা করি তিন যুগেরও পর এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে একটা চমৎকার ছাত্র সংসদ পাবে।"
আলোকিত গৌড়/এম.আর
মন্তব্য করুন: