[email protected] শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

রাকসু থেকে উঠে এসে জাতীয় নেতৃত্বে তারা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৮:০৮

ফাইল ছবি

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক। এ ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দীর্ঘ সময় পরে আবারও নেতৃত্ব তৈরির সম্ভাবনায় উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে এটি ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)’ নামে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে ১৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো রাকসু নির্বাচন হয়নি। সেই শেষ নির্বাচনের প্রজন্ম পেরিয়ে এসেছে নতুন প্রজন্ম, যারা এখন নতুন আশায় বুক বেঁধেছে।

রাকসু বরাবরই শুধু একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি হয়ে উঠেছিল দেশের জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম সূতিকাগার। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে রাকসুতে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রাকসুর ভিপি ও জিএস পদে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী পরবর্তীতে হয়েছেন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা।

১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন আবু সাইয়িদ, যিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৭৩-৭৪ মেয়াদে ভিপি থাকা নুরুল ইসলাম ঠান্ডু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভিপি ছিলেন ফজলুর রহমান পটল, যিনি পরে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সত্তরের দশকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শামসুল হক টুকু পরবর্তীতে সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন।

১৯৮০-৮১ শিক্ষাবর্ষে ভিপি নির্বাচিত হন ফজলে হোসেন বাদশা, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে ১৯৮৯-৯০ সালে ভিপি হন রুহুল কবির রিজভী, যিনি বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র। একই নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচিত হন রুহুল কুদ্দুস বাবু, পরবর্তীতে যিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালের রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের জিএস নির্বাচিত হন নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।

নতুন নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ তফসিল। ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, জুলাইয়ের শেষে আচরণবিধি প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নির্বাচন কার্যক্রম। আগস্ট মাসজুড়ে চলবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, রাকসুর এই নির্বাচন শুধু একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে নেতৃত্ব বিকাশ ও গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন যুগের সূচনা। সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, রাকসু বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এটি জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবারও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম মনে করেন, রাকসু ছিল এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে তরুণদের চিন্তা, বক্তৃতা এবং নেতৃত্ব গঠনের ব্যতিক্রমী সুযোগ তৈরি হতো। রাকসু থেকে উঠে আসা অনেকেই পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ, মন্ত্রিসভা কিংবা রাজনৈতিক দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে এই নির্বাচন তরুণদের জন্য শুধু ভবিষ্যতের পথ খোঁজার একটি সুযোগই নয়, বরং গণতন্ত্রের চর্চা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণেও একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হতে পারে।

তিন দশকেরও বেশি সময় বন্ধ থাকা এই ঐতিহাসিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবারও চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন আশাবাদী, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-প্রশাসক ও রাজনীতিকদের কাছেও এটি নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছে। অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাচ্ছে না, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের পথও উন্মুক্ত করছে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর