রাকসু নির্বাচন: কোন প্যানেল কীভাবে শুরু করলো প্রচারণা

আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন–২০২৫ উপলক্ষে প্রার্থী চূড়ান্ত করাসহ সব ধরনের প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপরই শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ফলে পুরো ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনী আমেজে ভরপুর।

গত রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে লটারির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী সব প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণার সূচনা করে কমিশন।

ছাত্রদল সমর্থিত “ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম" প্যানেল:

প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই আচরণবিধি ভঙ্গ করে আলোচনায় এসেছে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। জিএস পদপ্রার্থী নাফিউল জীবন আচরণবিধি ভঙ্গ করে ক্লাসরুমে প্রচারণা চালান। এছাড়া পরিবহন মার্কেটের দোকানের সামনে পোস্টারও টানান সাফিন সিনেট সদস্য পদপ্রার্থী সাফিন আজমীর । এ ছাড়া ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর ও জিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষাকে আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলার গ্যালারীতে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনছে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাচ্ছি এবং তাদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি আরও জানান, লিফলেট, ভিডিও বার্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

ভিন্নধারার প্রচারণায় ছাত্রশিবির

শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ বরাবরের মতো এবারও প্রচারণায় নতুনত্ব এনেছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ আগ থেকেই হলগুলোতে আতর বিলিয়ে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু করে তারা।

তবে এবারের বিশেষ চমক এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী জায়িদ হাসান জোহাকে পুলিশের পোশাকে ভোট চাইতে দেখা যায়। গরুর গাড়িতে চড়ে ভিডিও বানিয়ে প্রচারণা চালান ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও এজিএস প্রার্থী এস. এম. সালমান সাব্বির। এসব ভিন্নধারার উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের নজর কেড়েছে।

প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য অধিকার। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান ও দাবি বাস্তবায়নের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হতে পারে রাকসু। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করছি এবং লিফলেট, ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি প্রচার করছি।

“সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ":
রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রার্থী তাসিন খানের নেতৃত্বে গঠিত ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ রবিবার সিরাজী ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়েই তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়। পাশাপাশি ফেসবুকে ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের কর্মসূচি প্রচার করছে প্যানেলটি।

“রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ":
ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ ভিন্ন এক ধারা বেছে নিয়েছে প্রচারণার শুরুতে। ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ ও জিএস প্রার্থী আফরিন জাহান নেতৃত্বে প্যানেলের সদস্যরা দুপুরে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে দেখা যায় তাদের।

“গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ":
বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্রথম দিনের প্রচারণা শুরু করে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে। ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুলের নেতৃত্বে প্যানেলটির সদস্যরা পরে বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

"অপরাজেয়–৭১, অপ্রতিরোধ্য–২৪":
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ‘অপরাজেয়–৭১, অপ্রতিরোধ্য–২৪’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মাসুদ কিবরিয়া প্রথম দিন থেকেই সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় নামেন। টুকিটাকি চত্বর, আমতলা ও বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে লিফলেট হাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘুরে বেড়ান প্যানেলটির প্রার্থীরা।

“স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট":
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ ও ব্যালট নম্বর পাওয়ার পরপরই প্রচারণায় নামে। ভিপি প্রার্থী তাওহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রার্থীকে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে।

‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য':
সাবেক ২ সমন্বয়কের নেতৃত্বে গঠিত এ প্যানেলের ভিপি পদে লড়ছেন মেহেদী সজীব ও জিএস পদে লড়ছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। প্যানেলের প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে লিফলেট হাতে প্রচারণা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচার করতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রার্থীকে৷ প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলনে, যারা ভোটার আছেন তাদের কাছে গিয়ে আমরা সরাসরি প্রচারণা চালাচ্ছি এতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করছেন সেইটা আমরা বুঝতে পারছি। প্লিজ আপনারা কেউ বিরক্ত হবেন না। আমাদের প্রার্থী হিসেবে যেমন এটি প্রথন ভোট তেমনই আপনাদেরও এটি প্রথন ভোট। সামনের আরও ৯দিন প্রাণবন্তভাবে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাবো।