[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

হিমাগারে ৩ জনকে নির্যাতন, জামিন আ.লীগ নেতার তিন ছেলে-মেয়ের

মো: ইয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:০২

ছবি- আলোকিত গৌড়

রাজশাহীর পবার বায়া এলাকায় হিমাগারে ডেকে নিয়ে ৩ জনকে অমানবিক নির্যাতনের মামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুর্বল ধারা বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে আদালতে গিয়েই জামিন পেয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের তিন ছেলে-মেয়ে। এ নিয়ে হতাশ বাদীপক্ষ।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে মোহাম্মদ আলী সরকারের মালিকানাধীন সরকার কোল্ড স্টোরেজে ডেকে নিয়ে এক তরুণ (২৭), এক নারী (৩০) ও এক কিশোরীকে (১৩) নির্মম নির্যাতন করা হয়। এদের মধ্যে ওই তরুণ একটি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই নারী ও কিশোরী তার খালাতো বোন। তাদের অভিযোগ, লাঠি, বাঁশ ও হাতুড়ি দিয়ে তাদের পেটানো হয়। পরবর্তীতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর স্থানীয়রা হিমাগারটি ঘিরে বিক্ষোভ করেন। সেখানে ভাঙচুর হয়। পরে পুলিশ তিনজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ হিমাগারে অবরুদ্ধ থাকা মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বুধবার তাদের আদালতে তোলা হয়। তাদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।

রাজশাহী নগর পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবদুর রফিক জানান, আসামিদের রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৪ মো. মনিরুজ্জামানের আদালতে তোলা হয়েছিল। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। আদালত থেকেই তারা চলে গেছেন।

মামলার এফআইআরে দেখা গেছে, ধারা ও অপরাধের বিবরণের কলামে লেখা আছে, ধারা-৩৪২/৩২৩/৩২৫ পেনাল কোড ১৮৬০, অবৈধ আটক করে ভোতা অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে সাধারণ ও গুরুত্বর জখম করার অপরাধ। অথচ এজাহারে লেখা আছে, সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ অপরাধ অন্য ধারায় পড়ে বলে আইনজীবীদের মত।

রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন,পেনাল কোডের ৩৪২ ও ৩২৩ ধারা জামিনযোগ্য। তবে ৩২৫ ধারা এখন জামিনযোগ্য নয়। এফআইআরে ৩২৫ ধারা থাকলেও এজাহারে হয়ত গ্যাপ ছিল। সে কারণে আসামিরা জামিন পেয়ে গেছেন। তবে সেফটি পিন ভোতা হয় না। এটি তীক্ষ্ণ অস্ত্র। সে কারণে পুলিশ ৩২৬ ধারা দিতে পারত।

মামলার বাদীর অভিযোগ, এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন ইচ্ছে করেই এফআইআরে দুর্বল ধারা বসিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামলা না করে সমঝোতা করে নেওয়ার জন্য পুলিশ একটি পক্ষকে দিয়ে তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি আপস করেননি। এখনও আপস করে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি আপস করবেন না।

বাদী বলেন, তিন আসামি যখন অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন তখন ওসি সেখানে গেলেও তাদের থানায় নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কোনো অভিযোগ ছাড়া তিনি থানায় নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাই ওসি কোল্ড স্টোরেজেই থাকেন, আমি থানায় অভিযোগ দিতে যাই। একজন কনস্টেবল প্রথমে ওসির সঙ্গে কথা বলেন এবং তারপর একটি অভিযোগ লেখেন। সেই অভিযোগ কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে গিয়ে ওসিকে দিলে তাদের থানায় নেওয়া হয়।

বাদী আরও বলেন, কথা ছিল এটা প্রাথমিক অভিযোগ, মামলা রেকর্ডের সময় ওসি আবার ডাকবেন এবং ঠিকমতো বর্ণনা লিখে মামলা রেকর্ড করা হবে। কিন্তু পরে তিনি আমাকে ডাকেননি। আমি ফোন করলেও ধরেননি। আগের খসড়া অভিযোগটাই এজাহার করে দিয়েছেন। এতে ইচ্ছেমতো ওসি দুর্বল ধারা বসিয়েছেন, তাতে আসামিরা জামিন পেয়েছেন।

মামলার আসামিদের বাবা মোহাম্মদ আলী সরকার রাজশাহীর একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। পর পর কয়েকটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী হতে দলের মনোনয়নও চেয়েছিলেন। গতবছর আওয়ামী সরকারের পতনের পর দলটির প্রভাবশালী নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও তিনি প্রকাশ্যেই আছেন। রাজশাহী নগরের উপশহরের নিজ বাড়িতেই বসবাস করছেন। তার ছেলে আহসান উদ্দিন সরকারও ব্যবসায়ী। আসামি হওয়া দুই মেয়েই থাকেন দেশের বাইরে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ দুর্বল করে মামলা রেকর্ড করেছে বলেই অভিযোগ বাদীপক্ষের।

জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, দুর্বল ধারা দিয়ে মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ ঠিক না। অপরাধ অনুযায়ী যেসব ধারা কাভার করে, সেগুলোই দেওয়া হয়েছে। সেফটি পিন ভোতা অস্ত্র কি না, এ প্রশ্নে ওসি বলেন, এটার জন্য আলাদা ধারা নেই।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর