বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, সেই ঐক্য তাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্টের মতো গণআন্দোলন সৃষ্টি হবে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে আন্দোলনরত ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তারা ৮ দলের বিজয় নয়, বরং বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চান। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত, স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতেই তাদের আন্দোলন। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকেই একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর চড়াও হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, দেশে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অরাজকতা আগের মতোই চলছে। অনেকেই ক্ষমতায় না থেকেও প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এবার তাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে তা হতে দেওয়া হবে না। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতে তুলে দিতে চান, তাদেরকে এমনভাবে তৈরি হতে হবে যেন তারা চাকরি করার পরিবর্তে চাকরি দিতে পারে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুই ধারার বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদ্রাসায় জ্ঞানের চর্চা হয়, সেখানে খুনোখুনি বা অস্ত্রবাজি নেই। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৫৪ বছরে অস্থিরতা, মাদক, অস্ত্রবাজি, যৌন নির্যাতনসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার মাধ্যমে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীরসাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, তবে কেউ কেউ নির্বাচনের ফলাফল মাথায় রেখে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস-গুন্ডামির মাধ্যমে ক্ষমতায় বসার সুযোগ আর কেউ পাবে না।
খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত—একদিকে ৭২-এর বাকশালপন্থি, অন্যদিকে ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থি শক্তি। তিনি জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের দাবি জানান এবং বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন জরুরি।
খেলাফত আন্দোলনের নেতারা বলেন, দেশের সংবিধান কোরআনভিত্তিক হওয়া উচিত এবং কোরআনের আইনেই জাতির শান্তি নিহিত। জাগপার সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে জনগণ হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, এদেশের মানুষ দালালি নয়, মুক্তি চায়—এ কারণেই ৮ দলের ঐক্য হয়েছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীরসাহেব চরমোনাই। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আল্লামা মামুনুল হক, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মুফতি মুসা বিন ইজহার, মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, ডা. হামিদুর রহমান আজাদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন।
সভায় বক্তারা নির্বাচন আগে ৫ দফা দাবি পূরণ ও গণভোট আয়োজনের জোর দাবি জানান।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: