বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনের শুরুতেই চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সই হতে যাচ্ছে।
রবিবার (১৮ মে) ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষই চীনে আম রপ্তানির আগ্রহ ও সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ২০১৯ সালেই চীনে আমসহ কিছু কৃষিপণ্য রপ্তানির অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল। তবে করোনাভাইরাস মহামারিসহ নানা কারণে তখন তা কার্যকর হয়নি। প্রায় ছয় বছর পর সেই উদ্যোগ এবার সফল হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, বাংলাদেশের আম স্বাদ ও গুণগত মানে উন্নত। চীনের বিশাল বাজারে এ আম ভালো প্রতিক্রিয়া পাবে। তিনি বলেন, “আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স আম পরিবহনের জন্য বিশেষ কার্গো সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুণগত মান বজায় রেখে আম উৎপাদন করা গেলে কম পরিবহন ব্যয়ের কারণে চীনে আম রপ্তানি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। বর্তমানে ইউরোপে আম পাঠাতে প্রতি কেজিতে ৩৫০-৩৮০ টাকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা পরিবহন খরচ হয়। সেখানে চীনে আম পাঠাতে কেজি প্রতি খরচ পড়ে মাত্র ৭০-৮৫ টাকা।
রপ্তানিকারকদের মতে, চীনের বাজার উন্মুক্ত হলে শুধু আম নয়, কাঁঠাল ও লিচুর মতো অন্যান্য ফলেরও রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
চীনের বাজারে আম রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাই করতে এরই মধ্যে চীনা প্রতিনিধিদল কয়েক দফায় বাংলাদেশ সফর করেছে এবং তারা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১,৩২১ টন। আগের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ আরও বেশি ছিল—২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩,১০০ টন এবং ২০২০-২১ সালে ১,৭৫৭ টন।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে ২১টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইতালি ও সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৩৬টি।
বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা আশাবাদী, চীনে আম রপ্তানির উদ্যোগ বাংলাদেশের কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: