ব্যস্ত দিনের শেষে অনেকেই রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না। অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে ঘুমের মান কমে যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্ধ্যার পর কিছু শান্ত ও নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে দ্রুত ঘুম আসে এবং ঘুম হয় গভীর ও প্রশান্ত।
ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো ঘুমের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত সন্ধ্যা থেকেই। শরীর ও মনকে ধীরে ধীরে শিথিল অবস্থায় আনতে পারলে মস্তিষ্ক সহজে ঘুমের সংকেত গ্রহণ করে।
সন্ধ্যার দিকে অল্প সময় হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং করলে শরীরের ক্লান্তি ও পেশির টান কমে। এতে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক হয়, মানসিক চাপ হ্রাস পায় এবং রাতে ঘুমের গুণগত মান বাড়ে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
রাতের খাবার সময়মতো খাওয়াও ভালো ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় না। ভারী ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারের বদলে হালকা, সহজপাচ্য খাবার খেলে রাতে ঘুম সহজে আসে।
সন্ধ্যার পর চা বা কফি পান করলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। চা–কফিতে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে, ফলে ঘুম দেরিতে আসে। তাই বিশেষজ্ঞরা বিকেল পাঁচটার পর ক্যাফেইন পরিহারের পরামর্শ দেন।
ঘরের আলো ও পরিবেশও ঘুমের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সন্ধ্যার পর উজ্জ্বল আলো কমিয়ে নরম আলো ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বিশ্রামের সংকেত পায়। এতে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা ঘুম আনার প্রধান উপাদান।
মোবাইল ফোন, টিভি বা ল্যাপটপের নীল আলো ঘুমের হরমোনে বাধা সৃষ্টি করে। তাই শোয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ রাখা ভালো। এতে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়।
ঘুমের আগে উষ্ণ পানিতে কয়েক মিনিট গোসল করলে শরীর ও মন শিথিল হয়। গোসলের পর শরীর ঠান্ডা হতে থাকলে ঘুমের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ তৈরি হয় এবং ঘুম দ্রুত আসে।
সন্ধ্যায় বা ঘুমানোর আগে বই পড়া কিংবা শান্ত, ধীরগতির সঙ্গীত শোনা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে এবং মন শান্ত হয়, যা গভীর ঘুমে সহায়ক।
অনেক সময় পরের দিনের কাজ বা ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকায় ঘুম আসে না। এ ক্ষেত্রে ঘুমের আগে ডায়েরি লেখা বা পরের দিনের কাজের তালিকা তৈরি করলে মন হালকা হয় এবং দুশ্চিন্তা কমে।
ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্ধ্যার পর শরীর ও মনকে শান্ত করার মতো অভ্যাস গড়ে তুললে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ঘুমের মোডে প্রবেশ করে। নিয়মিত ভালো ঘুম শুধু ক্লান্তি দূর করে না, বরং সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র: ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন (এনএসএফ), স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি (এসআরএস)
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: