শীত এলেই বাজারে ভরপুর দেখা মেলে মৌসুমি খেজুর গুড়ের। শুধু পিঠা-পায়েস বা মিষ্টিজাতীয় খাবারের উপকরণ হিসেবেই নয়, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতেও খেজুর গুড়ের জুড়ি নেই। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি শীতের মাসগুলোতে শরীরকে উষ্ণ ও শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিশোধিত চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে খেজুর গুড়ের কদর দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত খেজুর গুড় খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। শীতে খেজুর গুড় খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো—
শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি
খেজুর গুড় প্রাকৃতিক শর্করা ও কার্বোহাইড্রেটের সমৃদ্ধ উৎস। জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এতে থাকা জটিল শর্করা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠানামা না ঘটিয়ে দীর্ঘ সময় শরীরকে কর্মক্ষম রাখে।
হজমে সহায়তা করে
খেজুর গুড় হজমকারী এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে, যা শীতকালে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা ও বদহজমের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ খেজুর গুড়। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে, আর ম্যাগনেসিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে। নিউট্রিশন রিভিউ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, খনিজসমৃদ্ধ খাবার শরীরকে মৌসুমি সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
শরীর উষ্ণ রাখে
শীতকালে খেজুর গুড় খাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এর তাপ উৎপাদনকারী গুণ। এই থার্মোজেনিক বৈশিষ্ট্য শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তিল বা চিনাবাদামের সঙ্গে খেজুর গুড় খেলে উপকার আরও বাড়ে।
শরীরকে বিষমুক্ত করে
খেজুর গুড় শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসেবে কাজ করে। এটি লিভার ও অন্ত্র থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ফলে ত্বক সুস্থ থাকে, বিপাকক্রিয়া উন্নত হয় এবং শরীর আরও চাঙা অনুভব করে।
সব মিলিয়ে, শীতের দিনে খেজুর গুড় শুধু স্বাদের আনন্দই নয়, বরং সুস্থ ও সতেজ থাকতে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপাদান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: