[email protected] শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করল মিয়ানমার জান্তা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৩

সংগৃহিত ছবি

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতা ভিন্ন; দেশটির শাসনক্ষমতা এখনো পুরোপুরিভাবে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের হাতেই রয়ে গেছে। তিনি বর্তমানে একইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তা বাতিল করে এখন একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঘোষিত হয়েছে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন, যারা আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন তদারকি করবে।

তবে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এড়িয়ে যায়নি যে, এমন ঘোষণার মধ্যেও মিয়ানমারে প্রকৃত ক্ষমতার কাঠামোতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। সামরিক জান্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা মিন অং হ্লেইং এখনো রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কেবল সেনাবাহিনীর প্রধানই নন, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্বে আছেন। ফলে, অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে বেসামরিক শাসনের যে ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা শুধুই নামমাত্র—মরিচিকা।

মিয়ানমারের সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুন জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের পর জারি করা জরুরি অবস্থার মেয়াদ সাত দফায় বাড়ানোর পর এবার তা শেষ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই সেনাশাসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেয়।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখপাত্র জানান, মিন অং হ্লেইং বলেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির সময় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক সরকারের টানাপোড়েন বাড়ে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এনএলডিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে এসব অভিযানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গ্রামে গ্রামে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে, যা বারবার অস্বীকার করে এসেছে জান্তা সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা এবং নির্বাচনের প্রস্তাবকে অনেকেই আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন। পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলেই আখ্যায়িত করছে।

মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, "এই পরিবর্তন কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য। প্রকৃতপক্ষে, ক্ষমতা এখনো একই ব্যক্তিদের হাতে এবং তারা আগের মতোই দমন-পীড়ন চালিয়ে যাবে।"

তার মতে, এটি কেবল পুরোনো শাসকদের নতুন মুখোশে উপস্থাপন করার প্রয়াস। মিয়ানমারে বাস্তবিক অর্থে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসছে না। বরং, নির্বাচনের নামে সামরিক কর্তৃত্ব আরও দীর্ঘস্থায়ী করার প্রস্তুতিই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ঘোষিত নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব কম তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ বা স্বাধীনতা থাকবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে গুরুতর সংশয়।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর