৫ আগস্ট ২০২৪, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালান স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। মাত্র এক বছরের মাথায়, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, একই পথে হাঁটলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এবং জনদাবি উপেক্ষার কারণেই তার এই পতন ঘটে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা যেমন গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তেমনি নেপালের প্রধানমন্ত্রীরও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এক সময়ের বিপ্লবী দলগুলোই আজ জনরোষের শিকার। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যারা একসময় গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। একইভাবে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনিফাইড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট), যারা রাজতন্ত্র উচ্ছেদে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, তারাও আজ নতুন প্রজন্মের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হলো।
তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন এবং প্রাণহানি সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা পিছু হটেনি।
নেপালেও একই চিত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া প্রতিবাদ দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ‘জেন জি’ প্রজন্ম।
অধিকার ও সুযোগের লড়াই
বাংলাদেশে আন্দোলনের মূল ছিল কোটা সংস্কারের দাবি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে।
নেপালে বিক্ষোভকারীদের প্রধান অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। ‘নেপো কিডস’ হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতারা ও পরিবারের সদস্যরা বিলাসী জীবনযাপন করলেও সাধারণ মানুষ দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
দমন-পীড়ন ব্যর্থ
দুই দেশেই আন্দোলন দমাতে সহিংসতার আশ্রয় নেয় সরকার। বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার আন্দোলনকারী নিহত হলেও আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
নেপালে সেনাবাহিনী ও দাঙ্গা পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হন। কিন্তু এ দমন-পীড়ন আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। শেষ পর্যন্ত কেপি শর্মা অলিরও সামনে পদত্যাগ ছাড়া কোনো বিকল্প থাকেনি।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: