[email protected] মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মুর্শিদাবাদে ‘লাখো কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত’-এর ঘোষণা, নতুন বাবরি মসজিদ ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:০৩

সংগৃহিত ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এবার ‘লাখো কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত’-এর আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবির। কলকাতায় সনাতন সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘পাঁচ লাখ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচির দিনই তিনি এই ঘোষণা দেন।

হুমায়ুন কবির জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে মুর্শিদাবাদে একটি বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করে এক লাখ মুসলিমকে নিয়ে কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা হবে। এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য মাংস-ভাতের ভোজের ব্যবস্থাও থাকবে। তিনি বলেন, “বিজেপি যেমন রামমন্দিরের এজেন্ডায় রাজনীতি করছে, আমরাও মুসলিমদের অধিক আসনে জয়ের জন্য কোরআন পাঠের আয়োজন করব। এক লাখ হাফেজকে দিয়ে কোরআন পাঠ করানো হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গীতাপাঠ করতে পারেন, এতে আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। একইভাবে মুসলমানদের জন্য কোরআন পাঠের আয়োজন করব, যাতে বেশি করে বিধানসভায় সিট জয় করা যায়।”

এর আগে, ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩তম বার্ষিকীতে গত শনিবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ২ নম্বর ব্লকের ছেতিয়ানি এলাকায় নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হুমায়ুন কবির। মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরে হাইকোর্টের অনুমতি পাওয়ার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। সরকারিভাবে সংখ্যা জানানো না হলেও একাংশের দাবি, লক্ষাধিক মানুষ ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন। অনেক মুসল্লিকে মাথায় করে ইট বহন করতে দেখা যায়

তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হুমায়ুন কবিরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের আগে এই উদ্যোগ তৃণমূলের জন্য বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করেছেন, কিন্তু ভারতের মুসলিম সমাজ কোনো প্রতিবাদ করেনি। বাবরি মসজিদ আবার তৈরি হবে, কোনো শক্তিই তা আটকাতে পারবে না।”

এদিকে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের জন্য দানের ঢল নেমেছে। সভাস্থলে রাখা ১১টি দানবাক্স মাত্র দুই দিনেই পূর্ণ হয়ে যায়। রোববার বিশেষ মেশিনে টাকা গণনা শুরু হলে এখন পর্যন্ত চারটি বাক্স ও একটি বস্তা থেকে পাওয়া গেছে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার রুপি। পাশাপাশি কিউআর কোডের মাধ্যমে অনলাইনে এসেছে আরও ৯৩ লাখ রুপি।

হুমায়ুন কবির জানান, বাবরি মসজিদ নির্মাণে প্রায় ৩০০ কোটি রুপি ব্যয় হতে পারে, যা সম্পূর্ণভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অনুদানে নির্মিত হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সরকারের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হবে না, কারণ এতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে।

এছাড়া তিনি জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ইতোমধ্যে ৮০ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে ঘিরে গোটা ভারতজুড়ে তীব্র অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। ৩৩ বছর পর একই দিনে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

সূত্র: এবিপি আনন্দ

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর