[email protected] মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
৯ পৌষ ১৪৩২

গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের থাকতেই হবে: ট্রাম্পের মন্তব্যে ডেনমার্কের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৬

সংগৃহিত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকতে হবে—এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রিনল্যান্ড বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগের পর তিনি এই মন্তব্য করেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত এই আর্কটিক দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে নিজের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করলেন ট্রাম্প।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ দূত নিয়োগ এবং ট্রাম্পের বক্তব্য ডেনমার্কের সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নিয়োগের তাৎপর্য হলোযুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্ক থেকে আলাদা করে দেখছে এবং দ্বীপটির ওপর প্রভাব বিস্তারে আরও সক্রিয় হতে চাইছে। কারণ, বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি প্রকাশ্যেই গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার পক্ষে কাজ করার কথা বলেছেন।

গ্রিনল্যান্ড বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে লুইজিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং তাদের গ্রিনল্যান্ড থাকতেই হবে। তিনি জানান, ডেনমার্কের আধা-স্বায়ত্তশাসিত এই ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এগিয়ে নিতে জেফ ল্যান্ড্রি নেতৃত্ব দেবেন।

বিশেষ দূতরা আনুষ্ঠানিক কূটনীতিক না হওয়ায় তাদের নিয়োগে স্বাগতিক দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে এই নিয়োগ গ্রিনল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের আগ্রহ এখনও অটুট রয়েছেএমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ডেনমার্ক। কোপেনহেগেন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চাইবে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লকে রাসমুসেন এই নিয়োগকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ডেনমার্কের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা সম্মান করার আহ্বান জানান।

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন বলেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার কেবল গ্রিনল্যান্ডবাসীর। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতায় তারা প্রস্তুত, তবে তা অবশ্যই পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে হতে হবে। বিশেষ দূত নিয়োগে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর জেফ ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার লক্ষ্যে এই স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। এর আগেও তিনি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন করে মন্তব্য করেছিলেন।

গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের বসবাস। ১৯৭৯ সাল থেকে সেখানে ব্যাপক স্বশাসন চালু থাকলেও প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি এখনো ডেনমার্কের হাতে রয়েছে। যদিও অধিকাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ভবিষ্যতে স্বাধীনতা চায়, জনমত জরিপে দেখা গেছেযুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে।

ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান উল্লেখ করে বলেন, আশপাশের সমুদ্রে চীনা ও রুশ জাহাজের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য হুমকি। তিনি স্পষ্ট করে জানান, গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন খনিজ সম্পদের জন্য নয়, বরং নিরাপত্তার স্বার্থে।

এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের জনগণের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছেন। এর আগে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে, ২০১৯ সালে, গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড সরকার জানিয়ে দিয়েছিলগ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।

আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলার ফলে নতুন নৌপথ ও খনিজ সম্পদের প্রবেশাধিকার বাড়ায় অঞ্চলটিতে আন্তর্জাতিক কৌশলগত প্রতিযোগিতা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই গ্রিনল্যান্ড আবারও বৈশ্বিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।

 

সূত্র: বিবিসি

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর