[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাবিতে শিক্ষার্থীদর দেওয়া শিবিরের কুরবানির গোশতের হদিস মেলেনি আজও

আবু বকর সৈকত

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৫, ২১:২৮

প্রতীকী ছবি

২০২২ সালের ১২ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঈদ করা শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের কুরবানির গোশত বিতরণ করেছিল শাখা ছাত্রশিবির। বিষয়টা জানাজানি হলে সব গোশত জব্দ করে ক্যাফেটেরিয়ার ফ্রিজে রেখে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিন্তু শাখা ছাত্রশিবিরের দেওয়া সে গোশতের হদিস মেলেনি আজও। এ বিষয়ে তৎকালীন রাবি সেক্রেটারি ও সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম শনিবার (৩১ মে) তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি যা জানান তা হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি লেখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহ্য হলো প্রতিবছর স্থানীয় শহীদ পরিবার, জনশক্তি, গরিব শিক্ষার্থী ও অসহায় পরিবারগুলো নিয়ে একসাথে ঈদ উদযাপন করা। সেই ধারাবাহিতায় ২০২২ সালের ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে গোশত উপহার দেওয়ার সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন ভাইদের আন্তরিকতায় ও আল্লাহর রহমতে আমরা ৬টি গরু ও ২১টি খাসি কুরবানি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

আমাদের সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানরত ২২৬ জন শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের কথা ভেবে। তাঁদের কাছে আমরা কীভাবে গোশত পৌঁছাব? প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে বিগত বছরগুলোতে গোপনে কিছু পরিবার এবং শিক্ষার্থীদের নিকট পৌঁছানো হতো। কিন্তু হলের সকল ভাই-বোনের কাছে প্রশান্তির সাথে গোশত পৌঁছাতে পারিনি।

আমাদের সাংগঠনিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, সভাপতি অথবা সেক্রেটারি দুইজনের যেকোনো একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ করেন। ঈদের পরে শহীদ পরিবার, জনশক্তি ও অন্যান্য স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাবেক ভাইদের সাথে ঈদ উপভোগ করেন।

আজিজুর রহমান আজাদ ভাই (বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক) তখন বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি। তিনি ঈদুল ফিতর রাজশাহীতে করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহার দায়িত্ব পড়ে আমার কাঁধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অফিস সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন ভাই (সাবেক সভাপতি) এবং আমি, কয়েকজন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীতে ঈদ করি।

কুরবানির একপর্যায়ে গোশত বণ্টনের সময় আমরা চিন্তা করছিলাম আমাদের হলের ভাই-বোনদের কাছে কীভাবে এই গোশত পৌঁছাব? বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ভাইকে জানালাম ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি। কিছুক্ষণ পর ভাই জানালেন, কুরবানি তো আজ শেষ, রাত হয়ে গেছে। নিরাপাত্তা-সহ সার্বিক বিষয় চিন্তা করে আগামীকাল সকালে হলে গোশত পৌঁছানো যেতে পারে, তাহলে সবাই একসাথে আনন্দের সাথে দুপুরে খেতে পারবেন।

যেহেতু দীর্ঘদিন পর এইভাবে গোশত উপহার দিতে যাচ্ছি, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে গোপন মাধ্যমে খবর নিই। জানতে পারি আমরা যেন কোনো কার্যক্রম করতে না পারি, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে স্থানীয় ছাত্রলীগের স'ন্ত্রা'সী'রা অবস্থান করছে। সেজন্য খুব সতর্কতার সাথে আমরা সিদ্ধান্ত নিই ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে আগামীকাল সকালেই গোশত পৌঁছাব, (পরবর্তীকালে আল্লাহ সুযোগ দিলে তখন বোনদের কাছেও পৌঁছাব) ইনশাআল্লাহ।

পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী বিনোদপুর বাজার মসজিদ থেকে আমরা নফল নামাজ আদায় করে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যেহেতু বেশি সংখ্যক লোক ক্যাম্পাসে ঢুকলে প্রশাসনের চোখে পড়বে (সেসময় রাবির হলের সকল গেটে পুলিশ থাকত, গোয়েন্দাদেরও ব্যাপক তৎপরতা থাকত, ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারি ২ জনেরও পাশে বাড়ি), তাই আমরা ভাইদের ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে হলে পাঠাই। আর আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করি।

আমাদের গোশত পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর জানতে পারলাম, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোশতগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে।

তখন খুব খারাপ লেগেছিল। যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করে, আত্মসাৎ করে, তারা তাদের ২২৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আয়োজন করার প্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ আমরা সামান্য একটু চেষ্টা করলাম, সেই চেষ্টাটুকুও তারা সফল হতে দিলো না। বরং তারা গোশতগুলো শিক্ষার্থীদের মুখের সামনে থেকে ছিনিয়ে নিলো।

কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে ছবি আসতে থাকল, কারা কোন গেট দিয়ে গোশত বিতরণ করতে প্রবেশ করেছিল, কোন গেট দিয়ে বের হয়েছিল। সিসি ক্যামেরা দেখে দেখে প্রশাসন তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযান শুরু করে।
শুনলাম গোশতের ফরেনসিক টেস্ট করা হবে, তদন্ত করা হবে! সেজন্য মতিহার থানায় আমাদের নামে জিডিও করল।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের উপহার দেওয়া সেই গোশতের আজও সন্ধান মেলেনি।

আবারও ঈদ আসছে, প্রশাসন যেন আগের মতো অন্ধ-অমানবিক না হয়। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল শিক্ষার্থীকে পরিবার হিসাবে গ্রহণ করবেন, যারা থাকতে চায় তাদের থাকার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং কোরবানির আনন্দ উপভোগ করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

জব্দ করা সেই কুরবানির গোশত কী করা হয়েছিল জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, এটা ৩ বছর আগের ঘটনা। সেসময় শুনেছিলাম যে শিবিরের দেওয়া মাংস জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে কিছু পুরাতন কর্মচারী রয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে এ বিষয়ে খবর পাওয়া যাবে।

আসন্ন ঈদুল আজহায় ছাত্রশিবির যদি আবারও কুরবানির গোশত বিতরণের উদ্যোগ নেয় তাহলে প্রশাসনের অবস্থান কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
যেকোনো পজিটিভ কাজে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো বাঁধা দেবে না। আপনারা জানেন এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সামাজিক সংগঠন, জেলা সমিতি সহযোগিতা করেছিল। তারা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা এপ্রিসিয়েট করব এবং এতে কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরাও করব।

আলোকিত গৌড়/এম.আর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর