সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের ওপর আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে এ শুনানি নির্ধারিত রয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) একই বেঞ্চে প্রথম দিনের শুনানি শুরু হয়। পরে পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়। সেদিন সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও বিদুয়ানুল করিম।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পৃথক দুই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার যুক্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি আপিল দায়ের করা হয়। এর মধ্যে সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি, নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও পৃথক আপিল করা হয়।
২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে জাতীয় সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট দায়ের হয়।
হাইকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসংক্রান্ত ২০ ও ২১ ধারা, এছাড়া ৭ ক, ৭ খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদ অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। তবে পুরো সংশোধনী বাতিল না করে বাকি ধারাগুলো সংসদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৮ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল চেয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। আরেকটি আবেদন করেন নওগাঁর মোফাজ্জল হোসেন এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আপিল বিভাগ গত ১৩ নভেম্বর এসব আবেদন মঞ্জুর করে।
এ মামলায় ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস এবং সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি।
২০১১ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, নারীদের সংরক্ষিত আসন বাড়ানো, ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহাল, রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে জাতীয়তাবাদ-সমাজতন্ত্র-গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্তকরণসহ একাধিক পরিবর্তন আনা হয়। এছাড়া অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয় এবং নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমায় পরিবর্তন আনা হয়।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: