[email protected] শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
১২ পৌষ ১৪৩২

ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০১

ফাইল ছবি

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করলেও সরাসরি মাঠে না থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি এবং দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন।

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনএমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করছে। তার আগমনের খবরে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

তারেক রহমান বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টার দিকে তার যাত্রা শুরু হবে। তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। পথে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে।

তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রাক ও ট্রেনে করে ঢাকায় আসছেন। সংবর্ধনা মঞ্চের আশপাশের এলাকা ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

তিনি কী বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেনএমন প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এবারের প্রত্যাবর্তন একজন জাতীয় নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন। একসময় যারা তার সমালোচক ছিলেন, তারাও এখন তার রাজনৈতিক ভূমিকার প্রশংসা করছেন। তার মতে, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং এর মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত হবে।

বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা ঘটনায় উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা, বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী মনে করেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের জন্য ইতিবাচক সংকেত। তার মতে, এ ঘটনায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান বলেন, দেশে ফিরে তারেক রহমান সরাসরি দলকে নেতৃত্ব দেবেন, যা এতদিন অনুপস্থিত ছিল। তার প্রত্যাবর্তনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে এবং সাধারণ মানুষও স্বস্তি বোধ করবে। তিনি আরও বলেন, সংকটকালে ঐক্যের রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমান সময়েও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রয়োজন, আর সেই জায়গায় তারেক রহমান ধীরে ধীরে একটি ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠছেন।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন টুটুল বলেন, তারেক রহমানের সামনে রয়েছে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান, উগ্রপন্থি রাজনীতির ঝুঁকি মোকাবিলা, ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং চাপের মুখে থাকা অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারএই সবকিছুর জন্য বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে। উন্নত দেশে দীর্ঘদিন অবস্থানের অভিজ্ঞতা যদি তিনি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগ করতে পারেন, তবে একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হয়ে তারেক রহমান প্রায় ১৮ মাস কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সপরিবারে যুক্তরাজ্যে চলে যান। দীর্ঘ এই সময় পর তার প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন আশা ও সম্ভাবনার সঞ্চার করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর