[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
১ পৌষ ১৪৩২

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রলি ট্রাক্টরের দাপট, বাড়ছে দুর্ঘটনা ও আতঙ্ক

ফয়সাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৪১

ছবি- আলোকিত গৌড়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবৈধ ইট, বালু, মাটি বহনকারী ট্রলি ও ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। কাউকে আবার সারা জীবনের মতো বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। এছাড়া এগুলোর বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দ দূষণও।

ফলে পথচারীসহ জনসাধারণকে সার্বক্ষণিক আতংকের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু চোখের সামনে অবৈধ এই যানের অবাধ চলাচল দেখেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একাধিক প্রয়োজনীয়তা ও আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষিজমি চাষাবাদের জন্য কৃষকের কাছে ট্রাক্টর খুবই জনপ্রিয়। আর দেশের কৃষি উন্নয়ন তথা চাষবাসের কাজে ব্যবহার করার জন্যই সরকার বিদেশ থেকে ট্রাক্টর আমদানি করার অনুমতি দেয়। কিন্তু চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত এই ট্রাক্টর অবৈধ ট্রলি-ট্রাক বা নানা পরিবহনে রূপান্তিরত হয়ে মানুষের সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। আবাদি জমি ছেড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে গ্রামাঞ্চল, শহর ও বাজার কেন্দ্রিক সড়কগুলোতে। ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় শিশু-কিশোররাও অদক্ষভাবে এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় গত বছর মহাসড়কে ছোট বড় প্রায় সাড়ে 3 হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে করে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬২ জন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা দ্বিগুন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন জন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও হিসেবের খাতায় তা আসে নি। ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই আছে অবৈধ যানযার মধ্যে অন্যতম বেপরোয়া গতির এই ট্রাক্টরট্রলি

এদিকে, বেপরোয়া গতি ও কানফাটা আওয়াজে চলাচলকারী এসব ট্রাক্টরের কারণে শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ দেখা দিয়েছে। শব্দ ও বায়ুদুষণ এখন গ্রামের প্রতন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে দিয়েছে এসব ট্রাক্টর ও ট্রলি। এছাড়া এই এদের বিশাল আকৃতির চাকার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাকা রাস্তার পেভমেন্ট ভেঙে যাচ্ছে। চুর্নবিচুর্ন হচ্ছে ইটের রাস্তা। গ্রামের মেঠো পথগুলোর মাটি আলগা হয়ে জমিতে মিশে যাচ্ছে। বিলীন হতে শুরু করেছে মেঠো পথগুলো। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক দিক।

ট্রাক্টর, ট্রলি ও এর ড্রাইভারের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় সহজেই এসব পরিবহন কিনে আনে ব্যবসায়ীরা। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষি কাজের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পরিবহন কাজে। ফলে গ্রামগঞ্জ ও শহরে ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ট্রলি-ট্রাক্টরের ভয়ে রাস্তা-ঘাটে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে মানুষ। সড়কে এই অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশসহ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব ট্রলি-ট্রাক্টর সড়কে চলাচল করার কারণে জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখেও তা বন্ধ হচ্ছে না। বেশ কিছু ট্রাক্টর মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিয়েই এসব ট্রলি-ট্রাক্টর সড়ক-মহাসড়কে চালাচ্ছেন তারা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) শফিকুল আলম বলেন, ইদানিং বরেন্দ্র অঞ্চলের ধান এবং ধানের আইর আনা নেওয়ার কারণে সড়কে ট্রলি ও ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য কিছুটা বেড়েছে। তবে মৌসুম শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর