ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের মধ্যে বিশেষভাবে সমাদৃত ব্যক্তিত্ব ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সা.) চাচা আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের (রা.) সন্তান, সম্পর্কে নবীজির (সা.) চাচাতো ভাই হলেও বয়সে ছিলেন অনেক ছোট। নবীজির (সা.) নবুয়্যত লাভের প্রায় দশ বছর পর তার জন্ম হয়।
জন্ম ও পরিবার
কঠিন সময়ের মধ্যে—মক্কার বনু হাশিম গোত্র যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধে সংকটে—আবু তালিব উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। সে সময় ক্ষুধার্ত দিনগুলোতে মানুষকে গাছের পাতা ও পশুর চামড়া পর্যন্ত খেতে হচ্ছিল। এ কঠিন পরিবেশেই উম্মুল ফজল লুবাবা бинতে হারেস (রা.)-এর গর্ভে জন্ম নেন তিনি।
তার মা ছিলেন ইসলামের প্রথমদিকের গ্রহণকারীদের একজন। পিতা আব্বাস (রা.) প্রকাশ্যে ইসলাম না আনলেও নবীজির (সা.) শৈশব ও মক্কি জীবনে নীরবে ছিলেন অন্যতম সহযোগী। মক্কা বিজয়ের আগে তিনি প্রকাশ্যে মুসলমান হন। জন্ম থেকেই তাই ইবনে আব্বাস (রা.) বড় হন ইসলাম ও তাওহিদের পরিবেশে।
নবীজির (সা.) সান্নিধ্য ও বিশেষ দোয়া
নবীজির (সা.) জীবনের শেষ দিকে তিনি ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। কম বয়সেই তার মেধা, কৌতূহল ও স্মরণশক্তি নবীজিকে (সা.) মুগ্ধ করে। একবার তিনি নবীজির (সা.) জন্য অজুর পানি প্রস্তুত করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জন্য দোয়া করেন—
“হে আল্লাহ! তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করুন।”
(সহিহ বুখারি)
এই দোয়া তার জীবনে বাস্তব রূপ নিয়েছিল।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উজ্জ্বল উদাহরণ
নবীজির (সা.) ওফাতের পরও তিনি জ্ঞানের সাধনা চালিয়ে যান। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর পরামর্শসভায় সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জায়গা পান তিনি। প্রবীণ সাহাবিদের মাঝেও তার জ্ঞান ও ব্যাখ্যার গভীরতা সবাইকে বিস্মিত করত। ওমর (রা.) তাকে বলতেন—
“সে হলো তরুণদের মাঝে প্রবীণ।”
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাকে ‘হিবরুল উম্মাহ’—উম্মতের মহান জ্ঞানী—উপাধিতে ভূষিত করেন।
কোরআন ব্যাখ্যার সর্দার
ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন তাফসির জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের একজন। ‘তরজুমানুল কুরআন’ এবং ‘রঈসুল মুফাসসিরীন’ উপাধিতে তিনি পরিচিত। নবীজির (সা.) তাফসিরমূলক বর্ণনা সবচেয়ে বেশি এসেছে তার সূত্রে। কোরআনের গভীর অর্থ উদঘাটনে তার ব্যাখ্যা ছিল অতুলনীয়।
হাদিস বর্ণনায় অগ্রগণ্য
তিনি ছিলেন বহুবর্ণিত হাদিস সংরক্ষণকারীদের অন্যতম। তার বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ১৬৬০ থেকে ২৬৬০ বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মত পাওয়া যায়। সহিহ বুখারি ও মুসলিমে তার বর্ণিত মোট ৯৫টি হাদিস রয়েছে।
ইন্তেকাল
জীবনের শেষদিকে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। ৬৮ হিজরি (৬৮৭ খ্রিস্টাব্দ) তায়েফে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। তার জানাজা পড়ান মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা। তায়েফেই তিনি সমাহিত হন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: