শিক্ষার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো কলম। ইসলামে কলমের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ কলমকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এর শপথও করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ৪)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নুন, শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ের, যা তারা লিপিবদ্ধ করে।’ (সুরা কলম, আয়াত: ১)।
হাদিস শরিফে কলমের সৃষ্টি ও ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে, সবই লিখে ফেলে। এই লিখিত কিতাব আল্লাহর কাছে আরশে সংরক্ষিত আছে বলে তাফসিরে কুরতুবিতে বর্ণিত হয়েছে।
ইতিহাসবিদদের মতে, মানবজাতির মধ্যে সর্বপ্রথম কলম ব্যবহার করে লেখালেখির সূচনা করেন আল্লাহর নবী ইদরিস (আ.)। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক বলেন, আদম সন্তানদের মধ্যে প্রথম লেখক ছিলেন ইদরিস (আ.)। বেশির ভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, মহানবী (সা.) যে অনির্দিষ্ট নবীর কথা হাদিসে উল্লেখ করেছেন—যিনি লিখন পদ্ধতির সূচনা করেন—তিনি ছিলেন ইদরিস (আ.)। বর্ণনায় এসেছে, তিনি এমন এক নবী ছিলেন, যিনি মানুষের মাঝে লেখার সংস্কৃতি চালু করেন এবং অন্যদেরকেও তা শেখাতে উৎসাহ দেন।
ইতিহাসে আরও জানা যায়, ইদরিস (আ.) শুধু লেখালেখিতেই নয়, বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা, ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতির ব্যবহার এবং লোহার অস্ত্র নির্মাণ ও ব্যবহারের সূচনা করেন।
ইদরিস (আ.)-এর বংশধারা আদম (আ.) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। তাঁর বংশপরম্পরা হলো—ইদরিস বিন ইয়াদির বিন মাহলাইল বিন কিনান বিন আনুশ বিন শিস (আ.)। তাওরাতে তাঁকে ‘বানুখ’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর আরেকটি উপাধি ছিল ‘হারমাসুল হারামিসাহ’।
ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, ইদরিস (আ.) তিন শতাধিক বছর জীবিত ছিলেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম দুবার উল্লেখ রয়েছে। সুরা মারিয়ামে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই কিতাবে ইদরিসের কথা আলোচনা করো। নিশ্চয় সে ছিল একজন সত্যবাদী নবী। আমি তাকে সুউচ্চ আসনে সমাসীন করেছিলাম।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৫৬–৫৭)।
ইসলামে কলম তাই শুধু লেখার উপকরণ নয়; বরং এটি জ্ঞান, শিক্ষা ও মানবসভ্যতার অগ্রগতির এক মহান প্রতীক, যার মর্যাদা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) স্বয়ং প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: